× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সুমনের দ্বিতীয় জীবনের গল্প

প্রথম পাতা

রুদ্র মিজান
১ জুলাই ২০২০, বুধবার

অনেকের কাছেই বিস্ময়। কেউ কেউ বলছেন অলৌকিক। সুমন ব্যাপারী নিজেও বুঝতে পারছেন না কীভাবে বেঁচে গেছেন তিনি। বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত ফিরেছেন সদরঘাটের এই খুদে ব্যবসায়ী। লঞ্চটি ঘাটে ভিড়বে। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিছুক্ষণের মধ্যেই লঞ্চ থেকে নামবেন। এমন সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই লঞ্চে পানি উঠছিলো। এরমধ্যেই লঞ্চ থেকে বের হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন সুমন ব্যাপারী।
নিশ্চিত মৃত্যু জেনে উল্টে যাওয়া লঞ্চের ভেতরে থেকেই দোয়া, দুরুদ পড়েছেন। হঠাৎ করেই মাথায় কিছু একটার আঘাত পান। তারপর আর কিছু মনে নেই। তবে জ্ঞান হারানোর আগে সুমন ব্যাপারীর মনে হয়েছিলো তিনি যেখানে আছেন সেখানে খুব পানি নেই। হাঁটুপানির মধ্যেই আছেন তিনি। এভাবেই ১৩ ঘন্টা পর জীবিত ফেরার বর্ণনা দিয়েছেন সুমন ব্যাপারী।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে কথা হয় তার সঙ্গে। সুমন ব্যাপারী জানান, তিনি লঞ্চের নিচ তলায় ছিলেন। তার চোখে ঘুম ঘুম ভাব। লঞ্চটি সদরঘাটের কাছাকাছি। এরমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। হঠাৎ করেই দেখতে পান লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছে। লঞ্চ থেকে বের হতে চেষ্টা করেন। এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যেই পানিতে ভরে যায় নিচতলা। একপর্যায়ে পানির মধ্যে ডুবে যান তিনি। সুমন বলেন, ওই সময়ে কিছু পানি আমার মুখে ঢুকে যায়। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এর মধ্যেই আল্লাহ’র উসিলায় আস্তে আস্তে অন্য একটি জায়গায় চলে যাই। যেখানে তেমন পানি ছিলো না। হাঁটু পানি ছিল। সুমন জানান, তিনি দোয়া পড়েছেন। ইতিমধ্যে তার শরীরে যে পোশাক ছিল সেটা ভেসে গেছে। শুধুমাত্র গেঞ্জিটা ছিল। একপর্যায়ে গেঞ্জিটা খুলে কোমরে বেঁধে নেন তিনি। যাতে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা থাকে।
গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতালের দোতলায় একটি টেস্ট করাতে যান সুমন বেপারী। টেস্ট করানোর পর আবারও কথা হয় তার সঙ্গে। এসময় তিনি নতুন একটা তথ্য যোগ করে জানান, ডুবার সময় লঞ্চটি উল্টে যায়। তিনি তখন নিজেকে রক্ষা করতে লঞ্চ থেকে বের হতে চেষ্টা করছিলেন। এরমধ্যেই মাথায় কিছু একটার আঘাত পান। তারপর অচেতন হয়ে যান। এরপর আর কিছু মনে নেই। তবে রাতে হুট করেই বুঝতে পারেন তিনি পানিতে ভাসছেন। পরে উদ্ধারকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সুমন ব্যাপারীর ভাই শাহীন ব্যাপারী মানবজমিনকে জানান, সুমন কিভাবে বেঁচেছে তা নিজেও জানে না। লঞ্চের একটু ভেতরে ছিলো। পানি উঠার পর গলা পর্যন্ত ডুবে যায়। এরমধ্যে লঞ্চের কোনো এক জায়গায় ছিলো যেখানে পানি কম ছিলো। এসব তার এতো মনে নেই বলে জানান তিনি। রাজধানীর বাদামতলীর এলাকায় ফল বিক্রি করেন সুমন ব্যাপারী। সপ্তাহে একদিন গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির আব্দুল্লাহপুরে থাকেন। বাকি দিনগুলো সদরঘাটে বিভিন্ন নৌকায় রাত কাটান সুমন। বিয়ে করেননি। মা আমেনা খাতুন ও স্বজনদের টানেই গ্রামে যেতেন। সোমবার সকালে গ্রামের বাড়ি থেকেই প্রতিবেশী আরেক ফল বিক্রেতা মাসুমকে নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। কাঠপট্টি থেকে ৪০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে লঞ্চের নিচতলা বসেন।
বাংলাদেশ সিভিল ডিফেন্স এন্ড ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্ণেল জিল্লুর রহমান জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারের  সময় সুমন ব্যাপারীকে  ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা উদ্ধার করেন। তিনি হয়তো লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের ভেতর কোন এক যায়গায় ছিলেন, যেখানে  অক্সিজেন ছিলো। ওই  অক্সিজেনে তিনি দীর্ঘক্ষণ বেছে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার মিটফোর্ড হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার পরপরই সুমন ব্যাপারীকে অক্সিজেনসহ নিয়মানুযায়ী চিকিৎসা সেবা দেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের ওই ইউনিটের সহকারী রেজিষ্টার ডা. আমজাদ হোসেন জানান, তিনি পানিতে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন, এরকম আলামত রয়েছে। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছি। এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রাশীদ উন নবী  বলেন, সুমন ব্যাপারীকে প্রথম যখন হাসপাতলে নেয়া হয় তখন তার হালকা শ্বাসকষ্ট ছিলো। তবে, এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাটের শ্যামবাজার উল্টিগঞ্জ পয়েন্টে লঞ্চডুবির ঘটনায় ১৩ ঘন্টা পর সোমবার রাত ১০টার দিকে সুমন ব্যাপারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তিনি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি থানার আব্দুল্লপুর গ্রামের ফয়জুল বেপারীর পুত্র। আট ভাই বোনের মধ্যে সুমন  সবার ছোট।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর