× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে জমি কিনে যে কারণে আলোচনায় পাপুল দম্পতি

প্রথম পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার

সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল ও সেলিনা ইসলামের সাম্রাজ্য। আদম 
পাচারের নেটওয়ার্কও ছিলো সরব। এজন্য আগ্রহী হয়ে সিলেটেও জমি কিনেছিলেন তারা। এই জমির উপর এখনো ঝুলছে এমপি স্বামী-স্ত্রীর নামের সাইনবোর্ড। সিলেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আতাউল্লাহ সাকেরের কাছ থেকে ৯ কোটি টাকা দিয়ে ওই জমি কিনেছিলেন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকেও টক্কর দিয়েছিলেন তারা। এমপি পাপুল ও সেলিনা দম্পত্তি জমি কিনেছেন নাইওরপুল এলাকায়।
তামাবিল সড়কের প্রবেশ মুখ এটি। নাইওরপুলের রাস্তার পরিধি ছোটো। হাইওয়ে রুট হওয়ার কারণে আরিফুল হক চৌধুরী কয়েক বছর আগে এই রুটের আশপাশের জমির মালিকদের কাছে ড্রেন নির্মাণের জন্য কিছু জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তার এই অনুরোধ কেউ ফিরিয়ে দেননি। জমির মালিকরা রাস্তার পাশের ড্রেন নির্মাণের জন্য ২ অথবা ৩ ফুট করে নিজ উদ্যোগেই জায়গা ছেড়ে দেন। কিন্তু এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা জমি ছাড়তে নারাজ। তারা এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টির সমঝোতায় এগিয়ে আসেন পরিচিত জনেরা। অনুরোধ করে এমপি সেলিনাকে নিয়ে আসা হয়েছিলো সিলেটে। নগর ভবনেই তাকে নিয়ে বৈঠকে দুই অথবা তিন ফুট জমি ছেড়ে দিতে মেয়র অনুরোধ করেন। কিন্তু এতেও সায় দেননি তিনি। বরং জমিতে হাত দিয়ে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- একবার তাদের জমির পাশে কাজ করতে গেলে হুমকিও দেয়া হয়। ফলে এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনার দাপটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। নাইওরপুলে এমপি দম্পত্তির জমির পরিমাণ প্রায় ৪৯ শতক। ওই জমিতে একটি পেট্রোলপাম্প ছিলো। আগের মালিক আতাউল্লাহ সাকেরের মালিকানাধীন থাকার সময় পাম্পটি চালু ছিলো। ২০০৯ সালে এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা যৌথ নামে জমি ক্রয় করেন। এরপর থেকে পাম্পও বন্ধ। জমির আগের মালিক আতাউল্লাহ সাকের মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রয়োজনের কারণে ২০০৯ সালে তারা এই জমি এমপি পাপুল তার স্ত্রী সেলিনার কাছে বিক্রি করে দেন। প্রায় ৯ কোটি টাকায় তারা এই জমি বিক্রি করেন। তখন জমির দাম কম ছিলো। এখন এই জমির দাম হবে ২৫ কোটি টাকা। তবে- জমি বিক্রি করার পর থেকে এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনার লোকজন জমির দায়িত্বে রয়েছেন। এদিকে- জমি ক্রয় করার পর বিশাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এতে লিখা রয়েছেন- ‘ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম, সংসদ সদস্য, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) ও সেলিনা ইসলাম, সংসদ সদস্য, মহিলা আসন কুমিল্লা-১’। সিলেটের অনেকের কাছে এই নামগুলো অপরিচিত। কিন্তু এবার মানবপাচারের ঘটনায় এমপি পাপুল গ্রেপ্তারের পর জমি ও সাইনবোর্ডের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়- নগরীর রাস্তা সম্প্রসারণ কাজের অংশ হিসেবে মিরাবাজার-জিন্দাবাজার ও কুমারপাড়া-সোবহানীঘাট সড়কের কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। নাইওরপুল মোড়ে আসার পর বাধা দেন এমপি পাপুল দম্পতি। রাস্তার উভয় পাশের বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য জায়গা ছেড়ে দিলেও তাতে আপত্তি জানান পাপুল ও সেলিনা। জায়গা না নিতে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এদিকে- সিটি করপোরেশন অসহায় হয়ে এমপি দম্পতির জায়গা সরকারিভাবে অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান। এর কারণ- তামাবিল সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক, বাস সহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। রাস্তা ছোটো হওয়ার কারণে ওই এলাকায় যানজট নিত্যসঙ্গী। এ কারণে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শুধুমাত্র ড্রেন নির্মাণের জন্য জমি চেয়েছিলেন। কিন্তু উল্টো সিলেটে এসে দাপট দেখান এমপি দম্পতি। জনস্বার্থের এই বিষয়টি বিবেচনা করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। গতকাল বিকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘পাপুল ও সেলিনা এমপি’র দাপটের কারণে রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ করা যায়নি। পরে জায়গা অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদন মঞ্জুর হয়েছে এখন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও একটি অনুমতি লাগবে। সেটিও আজ-কালের মধ্যে পেয়ে যাবেন বলে জানান’।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর