× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মামলা কড়া করতে চান মা, আতঙ্কে মেয়ে

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া/সরাইল প্রতিনিধি
৫ জুলাই ২০২০, রবিবার

স্কুলছাত্রী সামিয়ার চোখেমুখে আতঙ্ক। ধর্ষিত হয়েছে সে, মামলা কড়া করতে এমন বক্তব্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে তাকে। তা না হলে আবারো চট্টগ্রাম নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তাকে ও তার পরিবারকে হয়রানি থেকে বাঁচানোর আবেদন জানান সামিয়া। বলেন, আপন চাচা-চাচী ও প্রতিবেশীদের ঘায়েল করার অস্ত্র তাকে বানিয়েছে মা শাহেনা বেগম। ২৬ দিন নিরাপত্তা হেফাজতে থেকে বাড়িতে আসার ২-৩ দিন পরই মা তাকে নিয়ে যান আবারো উকিলের কাছে। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে মা আর উকিলের চাপ, থানা-পুলিশের ভয়ভীতি, নিরাপত্তা হেফাজতে দিনগুজরানে বিপর্যস্ত এই কিশোরী। এর আগে এই নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়।
সব মিলিয়ে আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে তার মনে। পড়াশোনা উঠেছে লাটে। সরাইলের টিঘর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আবু সায়েদ মিয়ার মেয়ে সামিয়া আক্তার (১৪)। স্থানীয় ব্লুবার্ড স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

ওদিকে একের পর এক মামলা নিয়ে সরাইল থানা পুলিশ হামলে পড়ছে শাহেনার আক্রোশের শিকার তার ভাসুর-জা’র পরিবারের ওপর। এর আগে ওই পরিবারের ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে আসামি বানিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এএসআইকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। বদলি হয় আরেক দারোগা। কিন্তু হয়রানি থেকে পরিত্রাণ মিলছে না দরিদ্র কাশেম মিয়া ও আবদুস সাত্তারের পরিবারের। শাহেনার কথাতেই চলছে পুলিশ।
মেয়ে সামিয়াকে অপহরণের অভিযোগে শাহেনা গত ২৯শে মে সরাইল থানায় একটি মামলা করেন। এতে টিঘর গ্রামের ইয়াছিন মিয়া (২২)সহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। সামিয়ার দুই চাচা কাশেম মিয়া ও আবদুস সাত্তার মিয়াকেও আসামি করা হয় এই মামলায়। আবদুস সাত্তার ইতিপূর্বে এই থানায় কর্মরত এএসআই হেলালের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বাদী।

অভিযোগ উঠেছে সামিয়ার অপহরণ মামলা নিয়েও কারিশমা দেখিয়েছে পুলিশ। ২৯শে মে মামলা রেকর্ড হলেও তার আগের দিন আসামি ইয়াছিন মিয়া ও ফয়েজ মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের ছেড়ে দেয়ার কথা বলে সামিয়াকে থানায় ডেকে এনে উদ্ধার দেখানো হয়। ভয়ভীতি দেখানো হয় অপহরণ-ধর্ষনের স্বীকারোক্তি দিতে। এতে রাজি না হওয়ায় পরদিন তাদের ৩ জনকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দিতে সামিয়া তাকে কেউ অপহরণ করেনি এবং সে নিজেই তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল বলে জানায়। আদালতে সামিয়ার মা মেয়েকে জিম্মায় নেয়ার আবেদন করলে মেয়ে তার জিম্মায় যেতে রাজি হয়নি। এরপরই নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

অপহরণ মামলা দায়ের হওয়ার আগে ২৭শে মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় সামিয়া। এতে তার মা শাহেনা বেগম জোর করে রবিন নামে এক ছেলের সঙ্গে তাকে বিয়ে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করে সে। বিয়েতে তার প্রবাসী পিতা মো. আবু সায়েদের কোনো সম্মতি নেই বলেও উল্লেখ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থানার ওসি ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেন। কিন্তু এই অভিযোগের তদন্ত বাদ রেখে ওসি শাহেনার দেয়া অপহরণ মামলা রেকর্ড করেন। ২৯শে মে মামলা হলেও অপহরণ ঘটনার তারিখ দেখানো হয়েছে ১৫ই মে। মাঝের ১৪ দিন সামিয়া কোথায় ছিল তাহলে, মা-ই বা কেন তখন আইনি পদক্ষেপ নেননি, এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা আছে কিনা, এসবের কোনো কিছুই তদন্ত করেনি পুলিশ।

জানা যায়, গত বছরের ২৭শে সেপ্টেম্বর বাড়ির নলকূপের পানি ব্যবহার করা নিয়ে শাহেনার সঙ্গে কলহ-বিবাদ হয় তার জা আবদুস সাত্তারের স্ত্রী নূরজাহান বেগমের। এ ঘটনায় শাহেনা তাকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে পরদিন সরাইল থানায় একটি মামলা দেন। যাতে ভাসুর আবদুস সাত্তারের পরিবারের ৮ জনকে এবং আরেক ভাসুর আবুল কাসেমের স্ত্রীকে আসামি করা হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে সাত্তার ও তার ছেলে জাবেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ১৫ই অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শাহেনা প্রাণনাশের হুমকিতে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন বলে শিশু ইব্রাহিমসহ ভাসুর আবদুস সাত্তারের পুরো পরিবার এবং আরেক ভাসুর আবুল কাশেম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ইউএনও সেটি থানায় পাঠালে ওসি তা ডায়েরিভুক্ত (ডায়েরি নং ৬৮১/১৯) করে এএসআই মো. হেলাল চৌধুরীকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এই অভিযোগটি যখন থানায় দেয়া হয় তখন জেলে ছিলেন আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে জাবেদ। কিন্তু তাদেরকে অভিযুক্ত করে সরাইল থানায় নন এফ আই আর প্রসিকিউশন নং ৬৫/১৯, তাং ১৭/১১/২০১৯ইং দাখিল করেন এএসআই মো. হেলাল চৌধুরী। শুধু তাই নয়, এতে সাত্তারের ১০ বছর বয়সী শিশু ইব্রাহিমকেও আসামি বানিয়ে দেন ওই এএসআই। পারিবারিক বিরোধে আবুল কাশেম ভাই সাত্তারের পক্ষ নেয়ায় তার বিরুদ্ধে ৯ই নভেম্বর সরাইল থানায় শাহেনা বেগম একটি ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করেন।

সামিয়া জানায়, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। এরপরও পুলিশ তার চাচাতো ভাই ও চাচাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। আমি গেলে তাদের ছেড়ে দেবো বলে আমাকে থানায় নিয়ে আটক করে। ওরা আমারে অপহরণ-ধর্ষণ করছে এই কথা বলার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়। আমি ২৬ দিন জেলে ছিলাম (নিরাপত্তা হেফাজতে)। সেখান থেকে আসার পর আম্মু আমাকে নিয়ে উকিলের কাছে যান মামলা আরো কড়া করার জন্য। বলে তাদেরকে ৭ বছর জেল খাটাবে। আমাকে বলে তারা ধর্ষণ করেছে এই কথা বলার জন্য। তা না হলে আমাকে আবার জেলে পাঠাবে।
দেশে স্ত্রীর এই কাণ্ডকীর্তিতে দুশ্চিন্তায় সৌদি প্রবাসে ঘুম হারাম সামিয়ার বাবা আবু সায়েদের। ফোনে বলেন, এর আগে আমাকে না জানিয়ে গোপনে আমার বড় মেয়েকে এক ডাকাতের কাছে বাল্যবিয়ে দিয়েছে শাহেনা। এনিয়ে ঝগড়া হলে সে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। আমার মেজো মেয়ে সামিয়াকে আমি তার সঙ্গে যেতে দেইনি। তাকেও শাহেনা এক ডাকাতের সঙ্গে বিয়ে দিতে তৈরি হয়। আমার মেয়েকে কেউ অপহরণ করেনি। গত ২৪শে মে এসআই খলিল ১২ জন পুলিশ নিয়ে গিয়ে আমার শিশুকন্যাকে ধরার জন্য এক কিলোমিটার পর্যন্ত ধাওয়া করে। আমার স্ত্রী অন্যের প্ররোচনায় এপর্যন্ত আমার ভাইদের বিরুদ্ধে ৫টি মিথ্যা মামলা করেছে।

অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. খলিলুর রহমান বলেন, আসামি পক্ষ এসব কথা বলবে। মামলা রেকর্ড ওসি করেন জানিয়ে এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, মা মেয়েকে পাচ্ছে না। মা অপহরণের অভিযোগ দিলে আমরা মামলা নিয়ে ভিকটিম উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তার করি। ইউএনও’র কাছে কিশোরীর দেয়া অভিযোগের তদন্তের বিষয়েও স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি তার কাছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর