বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলের শুধু ফুটবলাররা নয়, দুর্বিষহ অবস্থায় জীবন কাটছে চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এবং পাইওনিয়ার ক্লাবগুলোর কোচদেরও । চরম অর্থ সংকটে দিন কাটছে ঢাকার বাইরের তৃণমূলে থাকা কোচদের। ধারদেনা করেই চলছে অনেকের পরিবার। আত্মসম্মানের ভয়ে মুখ ফুটে তারা বলতে পারছেন না কিছু। সংসারের হাল ধরার জন্য এখন অনেকে অন্য পেশায় নাম লেখাতে চাচ্ছেন। অথচ ফিফা-এএফসি থেকে কোটি কোটি টাকা পেলেও ওই কোচদের কোনো খোঁজই রাখেন না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্তারা।
করোনাকালে ফুটবলার কিংবা কোচ- কাউকেই বলার মতো কোনো সহযোগিতা করেনি বাফুফে। করোনাকালে হাঁপিয়ে উঠেছেন খুলনা খালিশপুর থানার তৃণমূলের কোচ শেখ আশরাফ হোসেন। কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে এই কোচ বলেন, ‘বাফুফের তত্ত্বাবধানে ক্লিয়ার মেন্স অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে কাজ করেছি।
বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে আমার খুলনার মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন এবং বঙ্গবন্ধু অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে ছেলেরা রানার্সআপ হয়েছে। দু’টি দলেরই কোচ ছিলাম। কিন্তু আজ কোন কাজ নেই আমার হাতে। তাই ছেলেদের ডেকে এনে ফুটবল শেখাই। তবে অর্থ পাই না। তাই ধারদেনা করেই বাবা-মাসহ ছয়জনের সংসার চালাতে হচ্ছে। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছি না। বাফুফেও আমাদের কোনো খবর রাখে না।’ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লীগে খেলা ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাবের কোচ মনোয়ার হোসেন ময়নার সংসার চলছে অন্যের দয়ায়। বাফুফের প্রতি চাপা ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় স্তরের লীগের কোচরা এমনিতেই ঠিকমতো বেতন পান না। প্রিমিয়ার লীগের কোচদের চেয়ে তাদের বেতনও অনেক কম। পরিবার চালাতে হলে তাই প্রতি মৌসুমে দু’তিনটি ক্লাবকে কোচিং করাতে হয় আমার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এবার সবকিছুই ভেস্তে গিয়েছে। বর্তমানে আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে পরিবার চালাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘করোনায় অসহায় দুস্থদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে বিসিবি, হকিসহ আরও ক’টি ফেডারেশন। কিন্তু আমাদের নিয়ে বাফুফের কোনো উদ্যোগ নেই।’ ঢাকায় বসবাস করলেও আর্থিক সংকটে ভুগছেন আরেক কোচ শাহাবউদ্দিন। এক বছর আগেও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কোচ ছিলেন তিনি। গেল বছর বঙ্গবন্ধু অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে বাছাই করা ৪০ জন নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এবছর বেকার। শাহাবউদ্দিন বলেন, ‘ঢাকায় ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকি আমি। একটি দোকান আছে সেখান থেকে মাসে ১৫ হাজার টাকা পাই। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল দিয়ে বাকি টাকায় সংসার চলে না। কাউকে বলতেও পারি না। এই কষ্ট সইতেও পারি না। খুবই কষ্টে আছি ভাই।’