× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাধা দেয়ায় খুন / ডিভোর্সের পর শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা

শেষের পাতা

শুভ্র দেব
৭ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মেয়ে সায়মা আক্তার (২০)। ২০১২ সালে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছিল একই জেলার ইয়াদ আলী ও জামেলা বেগমের ছেলে শাহআলম (৩২)-এর সঙ্গে। বিয়ের একেবারে প্রথমদিকে তাদের সংসার সুখেরই ছিল। ঘর আলো করে পরপর তাদের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সায়মা ও শাহআলমের সংসারে সেই সুখ বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। নানা কারণে তাদের মধ্যে বনিবনা হতো না। প্রায়ই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকতো। সায়মাও বুঝতে পারে তার স্বামী নেশাগ্রস্ত।
আর নেশাগ্রস্ত স্বামীর সঙ্গে তার সংসার করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সায়মা তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ঢাকা এসে আবার বিয়ে করে। শাহআলম সেটি মেনে নিতে পারেনি। সাবেক স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হলেও শাহআলম তার সন্তানদের কাছে যেতে চাইতো। স্ত্রীর সঙ্গে ফের শারীরিক সম্পর্ক ও টাকা চাইতো। কিন্তু সায়মা তাকে বাধা দিতো। সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার বর্তমান স্বামী শাহআলমকে মারধর করতো। এসব ক্ষোভ থেকেই শাহআলম সায়মাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।

সায়মা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই ফারুক (৩০) বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান স্বামীকে নিয়ে সবুজবাগের আহাম্মদবাগের মুসকান নজরুল প্যালেসের বিপরীতের একটি বস্তিতে তার বোন থাকতো। তার প্রথম স্বামী শাহআলম সেখানে গিয়ে প্রায়ই তাকে বিরক্ত করতো। তার বর্তমান স্বামী একাধিকবার বিরক্ত না করার অনুরোধ করলেও শাহআলম সেটি শুনেনি। পরে ১৯শে জুন আহাম্মদবাগের ৩৬/৩ বাসার পাশের সরু গলিতে শাহআলম অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন সায়মার পেটে চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে জখম করে। এসময় সায়মার বর্তমান স্বামী সাগর মিয়া তার চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ৯ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সায়মা মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায় শাহআলম। পরে ডিএমপি’র সবুজবাগ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার রাশেদ হাসানের নেতৃত্বে এই মামলার তদন্তে নামে সবুজবাগ থানা পুলিশ। গতকাল সবুজবাগ থানা পুলিশ এই মামলার মূল ঘাতক ও সায়মার স্বামী শাহআলমকে কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।  
গ্রেপ্তারের পর শাহআলম পুলিশকে জানিয়েছে, সায়মাকে বিয়ে করার পর সে তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। সংসার চলাকালীন সময়ে সায়মা প্রায়ই ঢাকায় চলে আসতো। এভাবে আসা-যাওয়া করতে করতে সে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। আর মাদক ব্যবসা করতে করতে তার সঙ্গে সাগর মিয়া নামের এক যুবকের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে সাত মাস আগে তারা দুজন বিয়ে করে। সায়মা তার দুই সন্তানকে নিয়ে বর্তমান স্বামীর সঙ্গে সবুজবাগের ওই ঠিকানায় থাকতো। শাহআলম তখন মাঝেমধ্যেই সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ওই এলাকায় যেত এবং বিভিন্ন অজুহাতে টাকা চাইতো। কিন্তু সায়মা নিজেও দেখা করতো না আবার সন্তানদের দেখা করতে দিতো না। বরং শাহআলম ওই এলাকায় গেলে সায়মার বর্তমান স্বামী তাকে মারধর করতো। পুলিশকে শাহআলম আরো জানিয়েছে, এসব বিষয় মিটমাট করার জন্য এলাকায়ও সে বিভিন্ন জনের কাছে অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে সালিশও হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এমনকি তাকে ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে সায়মা ঢাকা আসার পরও বিভিন্ন মাধ্যমে সে সায়মার সঙ্গে মেলামেশা ও মিটমাটের চেষ্টা করেছে। নানা চেষ্টা করে সে ব্যর্থ হওয়ার পর তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সে সায়মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মিশন বাস্তবায়ন করতে সে ২০০ টাকা দিয়ে একটা ছুরি কিনে। সেই ছুরি দিয়ে সায়মার বাসার পাশে গিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সবুজবাগ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাশেদ হাসান মানবজমিনকে বলেন, মূলত সায়মা ও তার বর্তমান স্বামীর প্রতি শাহআলমের একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে সায়মা সন্তানদের নিয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করা সে মেনে নিতে পারেনি। ডিভোর্সের পরও সে সায়মার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ও সন্তানদের কাছে নিতে চাইতো। মাঝেমধ্যে টাকা চাইলে সায়মা দিতো না। এলাকায় গিয়ে দেখা করতে চাইলে সায়মার বর্তমান স্বামীর মারধরেরও শিকার হয়। এজন্য তারমধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ জন্য পূর্ব পরিকল্পনামাফিক সায়মাকে খুন করে পালিয়ে যায়। পরে প্রযুক্তির সহযোগিতায় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। এই মামলায় এখনো শাহআলমকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এই মামলার তদন্ত ও আসামিকে গ্রেপ্তার করার জন্য ডিএমপি’র ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড এনালাইসিস ডিভিশনের (আইএডি) দারুণ সহযোগিতা পেয়েছি। তাই ডিএমপি’র এই বিভাগের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর