ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। তার নেতৃত্বে ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয় ভারত। কিন্তু দুই বছর পরই অধিনায়কত্ব হারান সৌরভ। এমনকি দল থেকেও বাদ দেওয়া হয় তাকে। বর্তমানে ভারত ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতির দায়িত্বে থাকা সৌরভের দাবি, তাকে বাদ দেয়ার চক্রান্তে জড়িত ছিল তখনকার বোর্ড কর্মকর্তাসহ অন্যরাও।
সৌরভকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রটা মূলত ভারত দলের তদানীন্তন অস্ট্রেলীয় কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের। ভারতীয় অধিনায়কের বিরুদ্ধে লেখা একটি চিঠি বিসিসিআইয়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন চ্যাপেল। যেটি ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে কলকাতার সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনকে সৌরভ বলেন, ‘আমি শুধু গ্রেগ চ্যাপেলকে দোষ দেবো না।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে চক্রান্তটা তিনিই শুরু করেছিলেন। বোর্ডের কাছে আমার বিরুদ্ধে ইমেইল পাঠান চ্যাপেল, যেটি ফাঁস হয়ে যায়। এমনটা হওয়া কি উচিৎ ছিল? ক্রিকেট টিম হলো একটা পরিবারের মতো। এখানে মতের ভিন্নতা থাকবে। পরিবারে ভুল বোঝাবুঝি তো হয়ই। সেক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে সব মিটিয়ে ফেলাই ভালো। আপনি কোচ, আপনার যদি মনে হয় আমার একটা নির্দিষ্ট ধাঁচে খেলা উচিৎ তাহলে আমাকে সেটা বলুন। যখন আমি খেলোয়াড় হয়ে দলে ফিরলাম তখন বললেন। তাহলে আগে কেন বললেন না?’
অধিনায়কত্ব হারানোর কিছুদিন পর দল থেকেও বাদ পড়েন সৌরভ। তিনি মনে করেন, তাকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা একজন বিদেশি কোচের ছিল না। সৌরভ বলেন, ‘অন্যরাও দুধে ধোয়া তুলসি পাতা নয়। একজন বিদেশি কোচের পক্ষে ভারতীয় অধিনায়ককে বাদ দেয়ার ক্ষমতা নেই। আমি বুঝতে পেরেছিলাম পুরো সিস্টেমের সাপোর্ট ছাড়া এমনটা সম্ভব নয়। আমাকে বাদ দেয়ার চক্রান্তে সবাই জড়িত ছিল।’
২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ফেরার পর পরই অধিনায়কত্ব হারান সৌরভ। ভারত দল নিয়ে তার স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটে তাতে। ২০০৭ বিশ্বকাপে রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে খেলেছিলেন সৌরভ। সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়েছিল ভারত। সৌরভ মনে করেন, তার সঙ্গে ‘বড় অবিচার’ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। চরম অবিচার। জিম্বাবুয়েতে সিরিজ জেতা দলের অধিনায়ক ছিলাম আমি। আর দেশে ফেরার পরই কিনা আমাকে বরখাস্ত করা হলো? স্বপ্ন দেখতাম ভারতকে ২০০৭ বিশ্বকাপ জেতাবো। আগের আসরে আমরা ফাইনালে হেরেছিলাম। আর স্বপ্ন দেখার কারণও ছিল। আমার অধীনে আগের ৫ বছরে ঘরে-বাইরে ভালো খেলছিল ভারত। তারপর হঠাৎ আমাকে বাদ দেওয়া হলো। প্রথমে ওয়ানডে, তারপর টেস্ট থেকে।’
২০০৭ সালে গোয়ালিয়রে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলেন সৌরভ। পরের বছর নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন সবশেষ টেস্ট ম্যাচটি। ১১৩ টেস্টে ১৬ সেঞ্চুরি ও ৩৫ হাফসেঞ্চুরিতে ৭,২১২ রান সংগ্রহ সৌরভের। ৩১১ ওয়ানডেতে এই বাঁহাতির সংগ্রহ ১১,৩৬৩ রান। ২২ সেঞ্চুরির সঙ্গে হাফসেঞ্চুরি রয়েছে ৭২টি। এছাড়া ওয়াডেতে ১০০ ও টেস্টে ৩২টি উইকেটও নিয়েছেন সৌরভ।