× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সাহারা খাতুন আর নেই

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১১ জুলাই ২০২০, শনিবার

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি আর নেই (ইন্না ... রাজিউন)। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া  ১১টায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রবীণ এই রাজনীতিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দীর্ঘদিন তিনি কিডনি, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ২ জুন তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ৬ই জুলাই তাকে ব্যংককে নেয়া হয়। এদিকে সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বিশেষ করে নিজ দলের নেতারা শোকে মুহ্যমান। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। এসব শোকবার্তায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন তারা। এছাড়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পাশাপাশি সাহারা খাতুনের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিকাশে তার অবদানের কথা স্মরণ করা হয়। এদিকে শুক্রবার রাতেই সাহারা কাতুনের মরদেহ থাইল্যান্ড থেকে দেশে আনা হয়। গতকাল দুপুরে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (মিডিয়া) কামরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ছুটির দিনের মধ্যেই আমরা দ্রুততার সঙ্গে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার লাশ আনার ব্যবস্থা করি। বিকেল সোয়া ৫টায় আমাদের একটি বিমান থাইল্যান্ডে যায়। রাতের মধ্যেই তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাহারা খাতুনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন: ১৯৪৩ সালের ১লা মার্চ তিনি ঢাকার কুর্মিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল আজিজ ও মাতার নাম টুরজান নেসা। শিক্ষাজীবনে তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি আর্জন করেন এবং রাজনীতির পাশাপাশি আইনপেশায় নিযুক্ত ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে নাম লেখান। আইনপেশায় আসার পর সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা গঠিত হলে তাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করেন এবং সারা ঢাকা শহরের মহিলাদের আইভি রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত করতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জাতীয় নেতা মরহুম তাজউদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা গঠন করে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই মিছিল মিটিং সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করেছেন। ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে নগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদিকা এবং একইসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদিকা, পরে তিনি আইন সম্পাদিকা নির্বাচিত হন, তখন তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ আর গ্রহণ করেননি। পরে তিনি পরবর্তী কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবেই ছিলেন। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, আইয়ুব-ইয়াহিয়া বিরোধী আন্দোলন, দেশ স্বাধীনের আন্দোলন, ৭৫’র পর অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং খালেদা জিয়ার নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন করেছেন রাজপথে। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে হরতাল, সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে একাধিকবার গ্রেপ্তার এবং নির্যাতিত হয়েছেন। আইনপেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের বহু সংখ্যক নেতাকর্মীর মামলা বিনাপয়সায় লড়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এর আগে ফখরুদ্দিন, মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার করা হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার সঙ্গে আবারও গ্রেপ্তার হন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া: সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিশেষ করে নিজ দলের নেতারা শোকে মুহ্যমান। তার মৃতুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, সাহারা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে তিনি গণতন্ত্রের বিকাশসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অপরিসীম অবদান রেখেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিককে হারালো। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে সাহারা খাতুন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজীবন কাজ করে গেছেন এবং দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সকল সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন দক্ষ নারীনেত্রী এবং সৎ জননেতাকে হারালো। আমি হারালাম এক পরীক্ষিত ও বিশ্বস্থ সহযোদ্ধাকে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি সাহারা খাতুনের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তার পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আরও অনেকে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর