× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুর্নীতি-পকেটমার মডেল

মত-মতান্তর

এএমএম নাসির উদ্দিন, সাবেক সচিব
১২ জুলাই ২০২০, রবিবার

পকেটমারা বা কাটা একটা প্রাচীন পেশা। শহর, বন্দর, বাজার, বাস, টেম্পু, ট্রেন, লঞ্চ, জানাযা, মিলাদ, জনসভা ইত্যাদি যেখানেই জনসমাবেশ সেখানেই পকেটমারদের পোয়াবারো। আগের দিনে পকেট মারদের লক্ষ্য ছিলো মুলত নগদ টাকা আর মানিব্যাগ(Purse)। হালে মোবাইল সেট গায়েব করা পকেট মারদের একটা টার্গেট। পকেট মারদের পেশা, কর্মপদ্ধতিও পেশাগত ঝুঁকি মোকাবেলার কৌশল ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন একটা সাপ্তাহিকে বেশ কিছুদিন আগে পড়েছিলাম। প্রতিবেদনটিতে যা জেনেছি তা সংক্ষেপে মোটামুটি এরকমঃ
পকেট মাররা একটা সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে কাজ করে।কেউ একা এ কাজ করতে গেলে ধরা পড়ে যাবার আশংকা প্রবল।আর ধরা পড়লে রক্ষার কেউ থাকেনা। তাই এদের পরীক্ষিত কর্মপদ্ধতি হচ্ছে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কর্মসাধন। তিনটি স্তরে তারা কাজ করে।
সম্মুখসারির সদস্যরা সরাসরি পকেট মারার কাজটা করে। মক্কেল চিহ্নিতকরণ ও চিহ্নিত মক্কেলের পকেট মারা, নিজ ভৌগোলিক এলাকার বাহিরে হলে মক্কেল হস্তান্তর ইত্যাদি তাদের কাজ। পকেট মারার সময় এরা তিন চারজন একসাথে থাকে। টাকা, মানিব্যাগ বা মোবাইল হাতিয়ে নেয়া মাত্রই নিমেষে হাতবদল হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্তরে যারা থাকে তারা সরাসরি পকেট মারার কাজ করেনা। প্রথম স্তরের সদস্য পকেট মারতে গিয়ে ধরা পড়লে হই চৈ, বাক বিতন্ডা হয় যা অনেক সময় কিল ঘুষি,লাথি গণপিটুনি পর্যন্ত গড়ায়। আর তখনই দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা সক্রিয় হয়। এরা উচ্চস্বরে পকেট মারকে গালিগালাজ সহ কিল ঘুষি মারতে থাকে।এদের কিল ঘুষির জোরের চেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি বেশি। গণপিটুনিতে সামনের কাতারে গিয়ে এরা কৌশলে ধৃত ব্যক্তির শারীরিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এরা আম জনতার পক্ষেই কাজ করছে এমন ভাব দেখায়। উদ্দেশ্য, ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নেয়া এবং ধৃত ব্যক্তিকে কব্জা করা। এক পর্যায়ে ধৃত ব্যক্তিকে আরো নির্যাতন করা বা পুলিশে দেয়ার কথা বলে শার্টের কলার ধরে একদিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং ধৃত ব্যক্তির চম্পট দেয়ার ব্যবস্হা করে। এরাই প্রাথমিক বিপদ থেকে পকেট মারদের রক্ষা করে। গণপিটুনিতে অংশগ্রহণটা এদের অভিনয়,ধৃত সহযোগীকে রক্ষার কৌশল মাত্র। এ কৌশল ব্যর্থ হলে থানা পুলিশ কোর্ট কাছারী করতে হয় এবং তখনই তৃতীয় স্তর তথা গডফাদাররা সক্রিয় হয়।পকেট মারতে গিয়ে ধরা না পড়লে নির্বিঘ্নে কাজ চলতে থাকে এবং ধরা পড়লেই কেবল কিছু কিল ঘুষি লাথি খেতে হয় যা Professional hazard হিসেবেই বিবেচিত।এটাই পকেট মারদের পরীক্ষিত মডেল।বাংলাদেশে দুর্নীতি মোটামুটি এ পকেটমার মডেলেই চলছে। দুর্নীতি সব খাতেই,কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই। এন্তার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা,ভূমি ,রেজিস্ট্রি,রাজস্ব,পুলিশ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক যোগাযোগ, স্হানীয় সরকার প্রকৌশল, গণপূর্ত ইত্যাদি সবখাতের বিরুদ্ধেও। হালে স্বাস্থ্য খাত ধরা খেয়েছে। অতএব কিল ঘুষি লাথি চলছে।চলছে চিৎকার চেঁচামেচি, সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল, টিভি টক শোতে উত্তপ্ত আলোচনা। অভিজ্ঞতা বলে,ক'দিন পর সব চাপা পড়ে যাবে এবং অপরাধীরা সময় সুযোগ বুঝে কেটে পড়বে।অন্যান্য খাতের দুর্নীতিবাজদের কাজ কিন্তু থেমে নেই। চলবে অবিরত দুর্ভাগ্যক্রমে ধরা না খাওয়া পর্যন্ত। ধরা না খেলে জাতি জানতেও পারবেনা। ক'দিন আগে বালিশ কান্ডে ধরা খেয়ে ছিল গণপূর্ত। এর আগে বাংলাদেশ ব্যংকের রিজার্ভ চুরি,শেয়ার বাজার লুট,ব্যংক লুট ইত্যাদি নানা কিছিমের ধরা খাওয়া ও চেঁচামেচি দেখেছে জাতি। পকেট মার মডেলে সবই আপন গতিতে হিল্লে হয়ে গেছে বা যাবে যথাসময়ে। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ এর জন্যে সুযোগ ও সহায়ক সব ব্যবস্থা রেখে দুর্নীতি দমন করা যায়না।দুর্নীতি দেদারছে করার সুযোগ রাখা হবে এবং আশা করা হবে দুদকই দুর্নীতি দমন করবে। এটা যথাযথ নয়। সারা গায়ে ঘা। মলম লাগানো হবে কোথায় !Prevention is better than cure.দুর্নীতি নিরাময়ের চেয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধই শ্রেয়। দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভবপর নয়।দুদক বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ নয় এবং এর লোকজন এদেশেরই সন্তান সন্ততি, কারো ভাই, বোন, ভাতিজা বা অন্য কেউ।এ আঙ্গিকেই দুদকের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা বাস্তব সম্মত।সরকার, আইন শৃংখলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ইত্যাদি এর সার্বিক সহযোগীতা এবং সর্বোপরি অর্থবহ রাজনৈতিক অঙ্গীকার ব্যতীত দুর্নীতি দমনে দুদকের পক্ষে সফলতা অর্জন সম্ভবপর নয়। মাছের আড়ত পাহারায় বিড়াল নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।প্রয়োজন আইনের শাসনও আইনের কঠোর নির্মোহ প্রয়োগ,দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সর্বস্তরের  জবাবদিহিতা  ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর