× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে করোনায় মৃত্যুর ‘সেঞ্চুরি’

দেশ বিদেশ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৩ জুলাই ২০২০, সোমবার

মহামারি করোনা। সিলেটে কেড়ে নিয়েছে অনেককেই। পরিচিত জনেরা হারিয়ে যাচ্ছেন চিরতরে। আবার অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে আইসিইউতে লড়ছেন। এ লড়াই থামছে না। দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। এটি কোনো ভাবেই কাম্য নয়। কেউ মেনে নিতে পারছে না এই মৃত্যুর মিছিল।
এরপরও বাড়ছে মৃত্যু, বাড়ছে মিছিল। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অন্ত নেই প্রবাসী শহর সিলেটে। প্রতিদিনই মাইকে ভেসে আসছে মৃত্যুর ঘোষণা। এতে করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে প্রিয় সিলেট। গতকাল রোববার সিলেটে করোনায় মৃত্যুর সেঞ্চুরি পূর্ণ হলো। গত সাড়ে ৩ মাসের করোনা লড়াইয়ে সিলেট থেকে হারিয়ে গেলেন ১০১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা সিলেটে। সিলেট জেলায় মারা গেছেন ৭৮ জন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ৯, হবিগঞ্জে ৬ ও মৌলভীবাজারে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল, নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশির ভাগ রোগী মারা যান। করোনায় মৃত্যু নিয়ে সিলেটবাসীর আফসোসের অন্ত নেই। খুব কাছের পরিচিত জনেরা ইতিমধ্যে করোনার কাছে অসহায় আত্মসমর্úণ করে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন। এর মধ্যে গত ১৫ই জুন সিলেটের মানুষ হারিয়েছে তাদের কাছের মানুষ বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। শেষে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। কামরানের মৃত্যু সিলেটবাসীকে কাঁদিয়ে যায়। এখনো চলছে তাকে নিয়ে আফসোস। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় কামরানকে রাজধানীর সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। এরপরও বাঁচানো যায়নি সিলেটের মানুষের প্রিয় নেতা কামরানকে। কামরানের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই আবারো শোকে কাতর হয়ে পড়লেন সিলেটের মানুষ। সিলেট বিএনপি’র শীর্ষ নেতা এমএ হককে হারাতে হয়েছে। তিনি ছিলেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। করোনার কাছে আত্মসমর্পণ করে সিলেটের মানুষের কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন এই নেতা। এমএ হকও সিলেটের সব মানুষের কাছে ছিলেন পরিচিতজন। তাকে ঘিরে আবর্তিত হতো সিলেটের বিএনপি’র রাজনীতি। সমাজসেবক হিসেবেও তার জুড়ি ছিল না। ১০ দিন আগে এমএ হক সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। এমএ হকের মৃত্যুতে সিলেট বিএনপি সহ সর্বস্তরের মানুষ কাঁদছে। এই মৃত্যুকে ঘিরে সিলেট বিএনপি এখন করোনার সচেতনতা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরও তার উদ্যোগে কোভিডের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছেন। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও প্রযুক্তির মাধ্যমে করোনার সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন। করোনার প্রথম আঘাত ছিল সিলেটের গরিবের ডাক্তার বলে পরিচিত মো. মঈন উদ্দিনের উপর। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন তিনি। করোনাকালে যখন ডাক্তাররা একেক করে ঘরবন্দি হয়ে গিয়েছিলেন ডা. মঈন উদ্দিন তখন রোগীর সেবায় ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি আক্রান্ত হয়ে মারাই গেলেন। এ ছাড়া করোনার কাছে হার মানলেন সিলেটের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোপাল শঙ্কর দে। করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে সিলেটে মারা গেছেন একজন ব্রাদার ও একজন সিনিয়র নার্স। গত মাসে রোগী দ্বারাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান শামসুদ্দিন হাসপাতালের সিনিয়র ব্রাদার রুহুল আমীন। আর গত সপ্তাহে মারা গেলেন আরেক সিনিয়র নার্স পারভীন বেগম। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, ‘করোনায় মৃত্যু কোনো ভাবে কাম্য নয়। সিলেটে প্রথমদিকে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটের শহীদ
শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আনুপাতিক হারে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা কম। এজন্য ডাক্তার সহ নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউ থেকে রেকর্ড পরিমাণ রোগী সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন বলে তিনি জানান।’ করোনায় সিলেটে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে বয়স্ক। তারা অনেকেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শেইড বাংলাদেশ সিলেটের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের তাদের ব্যবস্থাপনায় দাফন করেন। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ জন মৃত ব্যক্তির দাফন তারা সম্পন্ন করেছেন। এদিকে হিন্দু ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সিলেটে করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের সৎকার করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে শনিবার থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত একদিনে সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে চারজন মারা গেছেন। এর মধ্যে সিলেটে দুইজন, সুনামগঞ্জে একজন ও  মৌলভীবাজারে একজন। সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৯৬ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৩০৭০, সুনামগঞ্জে ১১৭০, হবিগঞ্জে ৮৯৯ ও মৌলভীবাজার  জেলায় ৬৫৭ জন। সিলেট অঞ্চলে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৩৪ জন। এর মধ্যে সিলেটে ১০৩, সুনামগঞ্জে ৪০, হবিগঞ্জে ৬৪ ও মৌলভীবাজারে ২৭ জন। এ ছাড়া করোনা পজেটিভ ও উপসর্গযুক্ত সব মিলিয়ে বিভাগজুড়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা মোট ৯২১ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৩৯১, সুনামগঞ্জে ২৭১, হবিগঞ্জে ১৯৭ ও মৌলভীবাজারে ৬০ জন। তারা সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর