আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের পর সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে অস্থায়ী পশুর হাট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। চলছে আন্দোলনও। ইতিমধ্যে এমসি কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা মাঠের সামনে মানববন্ধন করে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু করা হয়েছে। এই অবস্থায় সিলেট সিটি করপোরেশনও অনড়। তারা মাঠে পশুর হাট বসাতে প্রস্তুতি শুরু করেছে। অন্যদিকে, স্থানীয় ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদও মাঠে হাট বসানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার ভাষ্য- এমসি কলেজ মাঠে হাট বসলে সেটি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সিলেটের এমসি কলেজ মাঠও ঐতিহ্যবাহী। মেলার কারণে সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ, এমসি কলেজ মাঠ, শাহী ঈদগাহের শেখ রাসেল স্টেডিয়ামের অবস্থা খুব নাজুক। সবুজ ঘাসের পরিবর্তে ইট-বালুর আধিপত্য থাকায় এসব মাঠ খেলার জন্য অনেকটা অনুপযোগী। এরপরও এমসি কলেজ মাঠে বিকাল হলেই সিলেটে কয়েক শ’ শিশু-কিশোর এবং খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সদস্যরা অনুশীলন করে। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে তারা অনুশীলন করতে গিয়ে কেউ কেউ আহতও হন। এবার সিলেটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অস্থায়ী পশুর হাট করতে সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি স্থান নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ সুরমার ট্রাক টার্মিনালের পার্শ্ববর্তী এলাকা, সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ ও এমসি কলেজ মাঠ। আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে পশুর হাট বসানো নিয়ে সিলেটে আন্দোলন শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওই মাঠের পশুর হাট স্থগিত ঘোষণা করে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, যেহেতু আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে পশুর হাট হচ্ছে না। সে কারণে এবার এমসি কলেজ মাঠে একটু বৃহৎ পরিসরে পশুর হাট বসানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিকল্প জায়গা না থাকার কারণে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে এমসি কলেজ মাঠে পশুর হাট না বসাতে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছে। প্রথমে আন্দোলন শুরু করেন এমসি কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে এসে যুক্ত হয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। তিনদিন আগে তারা এমসি কলেজ মাঠের সামনে মানববন্ধন করেছে। কর্মসূচি পালন শেষে তারা মাঠের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এরপর তারা এমসি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানিয়ে দিয়েছে- কলেজ মাঠে কোনো ধরনের হাট তারা বরদাশত করবে না। এজন্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে প্রশাসনকে দায়ভার নিতে হবে। পরে সিলেট জেলা খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকেও মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়। খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির নেতাদের দাবি হচ্ছে- সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম কিংবা জেলা স্টেডিয়াম সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। মাঠের সুরক্ষার জন্য ওই দুটি মাঠ রিজার্ভ রাখা হয়েছে। ফলে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিভাগের খেলোয়াড়রা সকাল ও বিকালে এসে ওই মাঠে অনুশীলন করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন কয়েকশ’ ক্ষুদে খেলোয়াড় মাঠে এসে খেলা করে। এই মাঠে হাট বসালে পরবর্তীতে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ফলে মাঠে হাট না বসানোর দাবি করেন তারা। এদিকে এমসি কলেজ মাঠে হাট বসানোকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষও ক্ষুব্ধ। স্থানীয় ২০ নং ওয়ার্ডের এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে রোববার এমসি কলেজ মাঠ থেকে পশুর হাট সরানোর দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসক, সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র ও এমসি কলেজের অধ্যক্ষ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, এমসি কলেজ উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যাপীঠ। এই বিদ্যাপীঠে দেশ-বিদেশের জ্ঞানী-গুণী ও স্মরণীয় ব্যক্তিদের পদচারণা ছিল। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা ও ২০ নং ওয়ার্ডবাসীর চলাচলের সুবিধা বিবেচনায় এমসি মাঠ থেকে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সরে আসা দরকার। স্মারকলিপিতে অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের দাবি জানান স্থানীয়রা। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এমসি কলেজ মাঠে হাট করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিকল্প জায়গা হাতে নেই। আর রাস্তায় হাট বসানোর কারণে নগরীতে চলাচল করা সম্ভব হয় না। এ কারণে এবার প্রশাসনও চাইছে খোলামেলা জায়গায় হাট বসাতে। এ কারণে এমসি কলেজ মাঠকে বেছে নেয়া হয়েছে। এদিকে মাঠে হাট না বসাতে এমসি কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি এবং এলাকাবাসীর দাবির সঙ্গে এক মত ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদও। তিনি জানিয়েছেন, ‘এই মাঠে প্রতিদিন হাজারো ক্ষুদে খেলোয়াড় অনুশীলন করে। এই মাঠে অনুশীলন করে অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে খেলছে। সুতরাং খেলোয়াড় সৃষ্টিতে এমসি কলেজ মাঠ অন্যতম ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া এলাকার কাউন্সিলর হিসেবেও কখনো এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। করলে হয়তো আমি আগে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতাম।’