× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুর্ভোগ চরমে

শেষের পাতা

বাংলারজমিন ডেস্ক
২৯ জুলাই ২০২০, বুধবার
বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সব। উপায় নেই রান্নারও। সিরাজগঞ্জের ছোয়ানগাছা থেকে ছবিটি তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ

টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। প্রতিদিনই ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বানভাসিরা। দেশের ৩১টি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সিলেট বিভাগের কিছু জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অবনতি হয়েছে উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে। মাদারীপুরের ৪টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৭টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। চলনবিলে বেড়েই চলছে বন্যার পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ অবস্থা।

অলিউল আহসান কাজল, মাদারীপুর থেকে: প্রবল বর্ষণ ও অব্যাহত নদীর পানি বৃদ্ধিতে মাদারীপুরের ৪টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানির স্রোতের তীব্রতায় দ্রুত পানি প্রবেশ করে শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোতে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ক্রমেই নতুন করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে জেলার বাকি ৩টি উপজেলা রাজৈর কালকিনি ও মাদারীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। জেলায় এ পর্যন্ত ৩৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি ফসলি জমি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শিবচরের পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে  বিপদসীমার উপর দিয়ে এবং মাদারীপুর শহর আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৫ সে:মি: বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে শিবচরের পদ্মা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, মাতবরেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া নিম্ন কুমার নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বৃদ্ধির ফলে রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর, ইশিবপুর, বদরপাশা ইউনিয়ন ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল, বাহাদুরপুর, শিরখাড়া, ছিলারচর, পাঁচখোলা, কালিকাপুর, খোয়াজপুর, মস্তফাপুর, পেয়ারপুর, ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বাঁশগাড়ী, সাহেবরামপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যাকবলিত ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে নদী বাঁধ ও কাঁচাপাকা সড়ক ভেঙে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, মাদারীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩,৭০০ পরিবার ও নদী ভাঙনে ৯৮২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ ইউনিয়ন একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮টি। সর্ব মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ হবে প্রায় ৯০ হাজার। বন্যার পানি ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে আরো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে জানান, দু’চোখে ওদের জাগে আশা, থাকে ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন। ইচ্ছা থাকে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভালো ভাবে চলার। কিন্তু স্বপ্ন আর আশা সব ভেঙে বন্যা কেড়ে নিলো ওদের আশা ভরসা। চোখের সামনে কষ্টের ফসল তলিয়ে যেতে দেখে বাড়ছে শুধু হতাশা। ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে ক্ষেতের পর ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় তাদের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ভেঙে যেন চুরমার হয়ে গেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষক এখন দিশাহারা। আগামী দিনগুলো কীভাবে চলবে এই দুশ্চিন্তায় পড়েছে সর্বহারা কৃষকরা। চোখের জল যেন চোখেই শুকিয়ে যাচ্ছে তাদের। দেখার কেউ নেই।

জানা গেছে, জুন মাসের শেষের দিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তলিয়ে যায় নিম্নাঞ্চল সেই সঙ্গে শতশত হেক্টর পাট, চিনা, সবজি, বীজতলা। কমতে শুরু করে পানি আশা জাগে কৃষকের মনে। কিন্তু সেই আশা ভেঙে আবারো বাড়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি, তলিয়ে যায় পুরো চিলমারী। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় ক্ষেতের পাট ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে গেছে চিনা ক্ষেত, বীজতলা, সবজি ক্ষেতসহ ফসলি জমি। হাজার হাজার কৃষক পড়ে বিপাকে। কষ্ট করে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ক্ষেত তৈরি ফসল বুনলেও ফসল ঘরে তোলার আগে বন্যা সব নষ্ট করে দেয়ায় কৃষকের বাড়ছে কষ্ট পড়ছে চোখের পানি। যদিও পানি কমতে শুরু করেছিল আবারো অনেকের চোখে স্বপ্ন ছিল কিন্তু তৃতীয় দফার বন্যার সব স্বপ্নই চুরমার করে দিয়েছে বন্যার পানি। চোখের সামনেই কষ্টের তৈরি ক্ষেত নষ্ট হতে দেখে থামছে না চিলমারীর কৃষকের চোখের পানি। নয়ারহাট বজড়াদিয়ার খাতা এলাকার কৃষক মাহফুজার রহমান বলেন ৭ একর জমিতে চিনা বুনেছিল কিন্তু বন্যা সব নষ্ট করে দিলো এতে তার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই লাখ টাকা। একই এলাকার কৃষক আকবার আলী বলেন, অনেক আশা নিয়ে প্রায় ৫ একর জমিতে পাট বুনেছিলাম কিন্তু বন্যা আমার সব আশা নষ্ট করে ফকির বানিয়ে দিলো এখন আমি সামনের দিনগুলো কীভাবে পরিবার নিয়ে কাটাবো। চড়ুয়াপাড়া এলাকার আঃ করিম বলেন, স্বপ্ন ছিল ফসল ঘরে তুলবো বিক্রি করে ঘরের কাজসহ সামনের দিনগুলো একটু ভালো করে কাটাবো কিন্তু বারবার বন্যার হানায় সব স্বপ্ন আমার চুরমার করে দিলো। কৃষকরা অভিযোগ করেন বন্যায় ক্ষতিতে পড়লেও তারা পরামর্শ বা পাশে পায়নি কৃষি বিভাগের কাউকে। শুধু বন্যার সময় নয় বন্যার আগে কিংবা পরেও সঠিক সময় সঠিক পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য পায় না কৃষক বিভাগের লোকজনকে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় পাট ২ হাজার হেক্টর, চিনা ১৮১ হেক্টর, বীজতলা ৩২০ হেক্টর, আউশ ধান ২৮৫ হেক্টর, সবজি ক্ষেত ৭০ হেক্টর, কাউন ১৫, তিল ১৫১ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে এতে প্রায় ২৫ হাজার কৃষকের প্রায় দেড় কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৭টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল,ঘরবাড়ি, উপাসনালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সবকিছু হারিয়ে দিশাহারা বন্যার্তরা। উপজেলার নাছিরাবাদ ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগে কাটাচ্ছে পানিবন্দি এলাকার লোকজন। অনেকেই তারা কাটাচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দুয়াইর দরগাহ বাজার, গজারিয়া, নাসিরাবাদ ও চরদুয়াইরসহ এলাকার লোকজন।

চলনবিল (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, চলনবিলে বেড়েই চলছে বন্যার পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। ফলে জন জীবনে নেমে পড়েছে চরম দুর্বিষহ। গত সপ্তাহে বৃষ্টি ও  বর্তমানে উজান থেকে ঢলের পানি নেমে আসা এবং বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ার কারণে  সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বন্যার পানি দিন দিন বাড়ার ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতশত মাছের পুকুর ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। মাছ চাষিরা নেট দিয়ে পুকুরের  মাছ রক্ষা করতে চেষ্টা করছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ যার ফলে বন্যাকবলিত পরিবারগুলো কষ্টে দিনাতিপাত করছে।

বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে খামারি। গো-খাদ্যের সংকটের আশঙ্কা করছে খামার মালিকরা। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে দেখা দিচ্ছে পানি বাহিত রোগ।

সরজমিন দেখা যায়, উপজেলার কন্দুইল, মাকড়শোন, ভেটুয়া মাগুড়া, দক্ষিণ শ্যামপুর চরহামকুরিয়া দিঘি সগুনা, লালুয়ামাঝিরা, খরখড়িয়াসহ অনেক গ্রামের সিংহভাগ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি এখন পানির নিচে। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্থানে।

মাছ চাষি, জিয়াউর রহমান, সুলতান মাহমুদ, হাসান খন্দকার বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাতে  হঠাৎ করে বন্যার পানিতে পুকুরের পাড় তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। এতে আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া পরিবারগুলো বিভিন্ন স্কুলে  আশ্রয় নিয়েছে। গাদাগাদি করে একত্রে বসবাসের ফলে রয়েছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। ভেটুয়া গ্রামের বানভাসি পরিবারগুলো অভিযোগ করে বলেন, বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে আশ্রয়ের জন্য সরকারি স্কুলে অবস্থান করছি। আমাদের কাছে এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর