করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার দায় নির্ধারণে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। মঙ্গলবার দলটির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য মনগড়া সফলতার বিবেকহীন আত্মপ্রচার সরকারের বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। করোনা নিয়ন্ত্রণে আজগুবি সফলতা প্রমাণে পাণ্ডিতপনায় সরকার শুরু থেকেই কৌশলে সন্দেহজনকভাবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করে যাচ্ছে। করোনায় আজ পর্যন্ত ঘোষিত ৩২৩৪ জন মানুষের মূল্যবান জীবন ঝরে যাওয়ার পরও সরকারের আত্মতুষ্টির বিবেকহীন নিষ্ঠুর উপাখ্যান জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৭০ দিনে থাইল্যান্ডে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। তবু সে দেশের সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল বলে উল্লাস প্রকাশ করছে না। আর আমাদের প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল থাকার পরও সরকারের সফলতার মিথ্যাচার নির্মম তামাশার শামিল। এতে বাংলাদেশ অমানবিক ও অবিবেচক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে চিহ্নিত হচ্ছে।
করোনাভাইরাস সরকারের বিবেক এবং লজ্জা- দুটোকেই খেয়ে ফেলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের শুরুতেই সরকার বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন, যথেষ্ট সংখ্যায় করোনা পরীক্ষা, করোনা রোগীদের আইসোলেশন, সক্রিয়ভাবে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং লকডাউনসহ কোনোকিছু কার্যকর করতে পারেনি। উপরন্তু সরকার গার্মেন্টস খোলা-বন্ধ নিয়ে নাটক, ঈদে বাড়ি যাওয়া নিয়ে নানারকম আদেশ এবং লকডাউন না করে সারা দেশে অফিস ছুটি ঘোষণা করে সংক্রমণ বিস্তারে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রত্যক্ষ মদতে যে সব প্রতিষ্ঠান করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা করার অনুমোদন পেয়েছিল সে সব প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সনদে অনেক মানুষের মৃত্যু এবং সংক্রমণ বিস্তারে সহায়ক হয়েছে। সরকার সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েও আজ নির্লজ্জের মতো সাফল্যের বয়ান দিয়ে বিশ্বের কাছে রাষ্ট্রকে উপহাসের পাত্র করে তুলেছে। করোনার ভুয়া সনদ সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ধূলিসাৎ করেছে আর করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বয়ান- বাংলাদেশকে অবিবেচক ও নিম্নমানের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সরকারের ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে জেএসডি’র চার দফা প্রস্তাবনা:
(১) সরকারের ভুলের কারণে কত মানুষের মৃত্যু ও জীবন বিপন্ন হয়েছে এবং করোনা সংক্রমণ বিস্তার লাভ করেছে তার জন্য ‘বিচার বিভাগীয়’ তদন্ত কমিটি গঠন।
(২) লণ্ডভণ্ড স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরসহ দুর্নীতিবাজদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা।
(৩) নিম্নমানের মাস্ক এবং সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের কারণে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান।
(৪) বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি ও ভুয়া সনদ প্রদানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা।