× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চসিক প্রশাসক হলেন সুজন

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৫ আগস্ট ২০২০, বুধবার

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। করোনা সংক্রমণের কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় ৫ই আগস্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। ফলে এর আগেই স্থানীয় সরকার পরিষদ করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এর আগে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল চট্টগ্রাম মহানগর জুড়ে। বিশেষ করে কে হচ্ছেন প্রশাসক? বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, না কি দলীয় আস্থাভাজন কেউ? না কি সরকারি কোন আমলা। আর এসব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে। তবে আ জ ম নাছির উদ্দিনের না-তে খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক নিয়োগের পথ প্রশস্ত হয় বলে জানান দলীয় নেতাকর্মীরা।


এ ব্যাপারে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমার নিজস্ব কোনো অভিলাষ বা চাওয়া-পাওয়া নেই। তাই নির্ধারিত সময়ের বেশি আমি দায়িত্বে থাকতে চাইনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিট চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক বানিয়েছেন। দলের মনোনয়ন দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের মেয়র হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন-তাতেই আমি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, জীবনের ৬৪ বছর পার করেছি। নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে আমি চেষ্টা করেছি সমপূর্ণ কলুষমুক্ত থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। নিশ্চয়ই এই শহরের মানুষ তার প্রত্যক্ষদর্শী। বঙ্গবন্ধু কন্যার আদেশ-নির্দেশ শিরোধার্য মেনে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দলের জন্য কাজ করবো। চট্টলবাসীর সুখে-দুখে নিজেকে বিলিয়ে দেবো-এটাই আমার পরমব্রত।
খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এ পদে আসার জন্য আমি কোনো চেষ্টা-তদবির করিনি। ৫০ বছর ধরে মাঠে আছি। দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় পথ চলেছি। এটা চট্টগ্রামবাসী যেমন জানে, তেমনি জানেন জাতির জনকের কন্যা, আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, সেই আস্থার মর্যাদা জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো। সমস্ত মেধা, মনন দিয়ে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে যাবো।
দলীয় সূত্রমতে, খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মেয়র ও বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রীর বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন।  ১৯৭০ সালে কাট্টলী স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন খোরশেদ আলম সুজন। ছাত্র রাজনীতির প্রথম অবস্থায় আইয়ুব খান পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি” নামক একটি বই ছাত্র সমাজের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। বইটির বিরুদ্ধে তৎকালীন সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ উম্মাতাল আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে কনিষ্ট ছাত্র হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন সুজন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত বাঙালি সৈন্যদের সেবা শুশ্রুষার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ ছিল খোরশেদ আলম সুজনের। সেই অংশগ্রহণে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিহারীরা তাকে দুইবার ধরে নিয়ে গিয়েছিল হত্যা করার জন্য। পরবর্তীতে এলাকাবাসী গিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে।
১৯৭৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৭৪ সালে বর্তমান সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সমপাদক ও চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে প্রথম প্রতিবাদী মিছিল বের হয় আন্দরকিল্লা থেকে।
১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সুজন। ভর্তি হয়েই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্টা করেন। ১৯৭৬-৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সমপাদক নির্বাচিত হন সুজন। পরবর্তীতে ১৯৭৯-৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮২ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ১৯৮২-৮৪ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৬-৮৮ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি নির্বাচিত এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন খোরশেদ আলম সুজন।

এরপর মজুরী কমিশন আন্দোলনসহ বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন সুজন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ২ বার জেল খাটেন তিনি। ১৯৮৮-৯০ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিবিএ ননসিবিএ সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। ১৯৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী সংগঠনের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের অসহযোগ আন্দোলনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলন সফল করেন সুজন।
২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগ নামক সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নাগরিক সমস্যা এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেন সুজন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৬ই আগস্ট আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়রের দায়িত্ব নেন। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ আগস্ট। নিয়মানুযায়ী মেয়াদপূর্তির ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে হিসাবে ২৯শে মার্চ ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন তফসিলও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোটের এক সপ্তাহ আগে ২১শে মার্চ নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। স্থগিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি দলটির নগর কমিটির সাধারণ সমপাদক ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তার বদলে নৌকার মনোনয়ন পান নগর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সমপাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর