ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ
কবিতা /আবার ফিরে আসবো
অনলাইন
শহীদুল্লাহ ফরায়জী
(৩ বছর আগে) আগস্ট ৯, ২০২০, রবিবার, ৬:৫০ পূর্বাহ্ন
উৎসর্গ: মেজর সিনহা মো. রাশেদ
রাষ্ট্রের অস্ত্রধারী কয়েকজন
ঠান্ডা মাথায় আমাকে হত্যা করেছে
বিনা কারণে পৈশাচিক আনন্দ নিয়ে
আমাকে হত্যা করেছে
আমি রাষ্ট্রের জন্য জীবন বলিদান
করার অঙ্গীকারে আবদ্ধ নাগরিক
অথচ আমার সর্বনাশের সময়ে
রাষ্ট্র আমার পাশে দাঁড়ায়নি
বরং রাষ্ট্র ও আইনের প্রতি
পরম আনুগত্য প্রকাশের পরও
আমাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে
পরপর কয়েকটা গুলিতে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরও
আমি বেঁচে ছিলাম
রক্তের বানে ডুবে গিয়েও
আমি আশা করেছিলাম
হয়তো ওরা ভুল বুঝতে পেরে..
কিন্তু না
আমার মুমূর্ষ অবস্থা দেখে
আবারও কয়েকটা গুলি ছুড়লো
তখন বুঝলাম আমার মৃত্যু
রাষ্ট্রের খুব প্রয়োজন
রাষ্ট্র লাশের জন্য তৃষ্ণার্ত
মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি
প্রচুর রক্তক্ষরণে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি
তবু কেন জানি
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো
হে আমার প্রিয় জন্মভূমি
একবার আমার দিকে ফিরে তাকাও
একবার
হঠাৎ গাড়ির শব্দ
দুঃখ বিপর্যয়ের মাঝেও
আশান্বিত হলাম
চোখের সামনে দিগন্ত বিসারী
আলোকমালা দেখলাম
আমাকে বুঝি বাঁচানোর আয়োজন
বুটের ক্ষীণ শব্দ কানে আসছে
হয়তো দ্রুত স্ট্রেচারে তুলবে
কিন্তু না
স্রষ্ট্রার পবিত্র নাম জপরত
আমার নিষ্পাপ মুখমণ্ডল
তারা বুট জুতার
তীব্র তান্ডবে থেঁতলে দিলো
লজ্জায় অপমানে
আমার ভেতরটা ভেঙ্গে
চুরমার হয়ে গেলো
আমি আত্মিক সঙ্কটে আর
আত্ম নিগ্রহে তলিয়ে গেলাম
আমার প্রিয় জন্মভূমিতে
এই বুঝি আমার জীবনের প্রতিদান
বিশ্বাস করুন
আমি তখন মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়েছিলাম
অপমান লাঞ্ছনা আমার রক্তের কণায় কণায়
আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলো
অতুলনীয় তীব্রতার ধ্বংস বিপর্যয়ে
আমার আত্মা তখন বিলাপ করছিলো
কিন্তু আমার মাটির দেহ আর
পারলো না প্রাণটুকু ধরে রাখতে
আমার চিরনিদ্রা ও মৃত্যু নিশ্চিত করে
ওরা উল্লাস প্রকাশ করলো
আমার আত্মপরিচয়কে
ওরা নিমিষেই গুঁড়িয়ে দিলো
আমি আবার ফিরে আসবো
আমি ঘরে ঘরে যাবো
আমার হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রার্থনা করবো
আমি শহীদ মিনারে যাবো
স্মৃতিসৌধে যাবো
বধ্যভূমিতে যাবো আমি
বিনা বিচারে হত্যার বিচার চাইবো
আমি সরকার প্রধানের কাছে যাবো
দৃঢ়তার সাথে বলবো
আপনার জীবন সুরক্ষায়
আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলাম
এখন রাষ্ট্র আমার সমগ্র জীবন
নিশ্চিহ্ন করে দিলো
আমি তার বিচার চাইবো
আমাকে হত্যা করার পিছনের
সত্যটা কী জানতে চাইবো
আইনের শাসন ছাড়া
রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তি কোথায় থাকে
এমন মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো
আমি ছিলাম স্বপ্নচারী
আমার সব স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছে
সেই সব অপূর্ণ স্বপ্ন জাহাজ বোঝাই করে
সেনা প্রধানের কাছে হস্তান্তর করবো
রাষ্ট্র কিভাবে ধ্বংসে ডুবে গেছে
আমি সে সব প্রশ্ন উত্থাপন করবো
'লাশের প্রাপ্য সম্মান' আমি কেন পাইনি
অভিযোগ পেশ করবো
আমি একবার হলেও মায়ের কাছে যাবো
মা.. শোকে দগ্ধ হয়ে জায়নামাজে পড়ে আছে
আমার লাশের অমর্যাদা
মা তাঁর চোখের জলে
ধুঁয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছে
মা, তোমার শোকগাঁথাময় জীবন
আমি চাইনি
আমি শেষ পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছিলাম
তোমার কাছে একবারের জন্য
ফিরতে চেয়েছিলাম
কিন্তু ওরা আমার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করলো
ভয়ংকর রক্তপাতে নিষ্ঠুর মৃত্যু
আমাকে ছিনিয়ে নেবার সময়
আমি প্রাণপণে চিৎকার করে
মা, তোমাকে আমি ডেকেছিলাম
কিন্তু আমার মা বলার অধিকারকে
ওরা চিরতরে স্তব্ধ করে দিয়েছে
আমি আত্মবিশ্বাসের কাছে বন্দী
মা তোমার চিরকালীন ট্রাজেডি নিয়ে
মহাকাব্য লিখতে আসবো
অপেক্ষা করো
আবার ফিরে আসবো আমি।
লেখক: গীতিকার
৯ আগস্ট, ২০২০