বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ কেমিক্যাল বিস্ফোরণের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে লেবানন সরকার। দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ ও মন্ত্রীদের চাপের মুখে সোমবার রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। গত মঙ্গলবার বৈরুতে একটি কেমিক্যাল বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ১৬০ জনেরও বেশি। এরপরই দেশজুড়ে সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করে লেবানিজরা। শেষ দিকে সরকার টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন হাসান দিয়াব। অতঃপর এক টেলিভিশন সমপ্রচারে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে পদত্যাগের কথা জানান তিনি।
সিএনএন জানিয়েছে, ভাষণে দিয়াব দেশের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন আমরা এর বিরুদ্ধে বীরের মতো, সম্মানের সঙ্গে লড়াই করে গেছি। তবে গত মঙ্গলবারের ‘ভূমিকমপ’ লেবাননকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।
আমরা জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই বলে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে মন্ত্রী পরিষদের তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। এতে সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। হাসান দিয়াব অন্য মন্ত্রীদের বুঝিয়ে সরকার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে থাকেনি।
সোমবার বিকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে শুরু করে। তাদের হাতে সে সময় পাথর, পেট্রোল বোমা ও আগুন দেখা যায়। পুলিশের ওপর হামলাও চালায় তারা। পুলিশও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এরমধ্যেও অনেক আন্দোলনকারী পার্লামেন্টের মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা চালায়।
গত কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছে লেবানন। সামপ্রতিক সময়ে এসে দেশটির অর্থনীতি একেবারেই খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল। গত বছরও দেশটির সরকারের দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ আন্দোলন দেখা যায়। এরপর করোনাকালীন সময়ে দেশটির অর্থনীতি আরো নাজুক হয়ে পড়ে। তবে লকডাউন থাকায় আন্দোলনে ভাটা পড়েছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার বৈরুতে কেমিক্যাল বিস্ফোরণের পর অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১৬০ জন নিহতের পাশাপাশি আহত হন ৬ হাজারের বেশি মানুষ। গৃহহীন হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। ফলে আন্দোলন দ্রুতই শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
হাসান দিয়াব গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতায় আসেন। তিনি নিজেকে একজন সংস্কারক দাবি করে থাকেন। তবে তার সরকার ছিল মূলত ইসলামপন্থি সংগঠন হেজবুল্লাহ সমর্থিত। এ ছাড়া, লেবাননের অন্য বৃহৎ দলগুলোও তাকে সমর্থন দিয়েছে। এখন দেশটিকে এক বছরের মধ্যে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী খুঁজতে হবে।