× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আতিফের কষ্টের ফসল ভোগ করছেন গ্রামবাসী

ষোলো আনা

আইরিন আঁচল
১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার

মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিঃস্বার্থভাবে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন শেখ মুহাম্মদ আতিফ আসাদ। নিজ এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের হাসড়া মাজালিয়ায় গড়ে তুলেছেন ‘শহীদ মিলন স্মৃতি পাঠাগার’।

আতিফ অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৯-২০২০ সেশনে জামালপুর সরকারি কলেজে পড়েছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানে। বাবার পক্ষে তার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হতো না। এইজন্য তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রী, খাট বার্নিশ ও ধান কাটার কাজ করেন। আতিফরা সাত ভাইবোন। অর্থের অভাবে কিনতে পারতেন না বই, পাননি প্রাইভেট পড়ার সুযোগ এমনকি নিয়মিত স্কুল যাবার সুযোগ।

বইয়ের প্রতি প্রবল ভালোবাসা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে একটি পাঠাগার করবেন। ছিলো শুধু ইচ্ছাটাই- ছিলো না আর্থিক সক্ষমতা, এমনকি পাঠাগার করার পর্যাপ্ত স্থান।
বাধ্য হয়ে আতিফ , ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঘরের বারান্দায় একটি পাঠাগার নির্মাণ করেন। তিনি মনে করেন, একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে গিয়ে বাবা-মাকে হিমশিম খেতে হয়। তাদের পক্ষে অন্যান্য বই কিনে জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব। এজন্য আতিফ বিনামূল্যে বই পাঠদানের জন্য শুরুতে তার ভাইয়ের সঙ্গে পাঠাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে ২০১৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তার ভাইকে হত্যা করা হয়। এই ভাই তাকে সব সময় পাঠাগার নির্মাণের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। তাই তিনি ভাইয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে ভাইয়ের নামেই পাঠাগারের নামকরণ করেন ‘শহীদ মিলন স্মৃতি পাঠাগার।’ বর্তমানে তার পাঠাগারে রয়েছে দুই হাজার বই।

তার ঘরের বারান্দায় পাটকাঠি দিয়ে একটি ঘর বানান। সেখানে মাত্র ২০টি বই নিয়ে পাঠাগার নির্মাণ করেন। তার বিশ্বাস ছিল, যেহেতু এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো কাজ, তিনি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে সাহায্য সহযোগিতা পাবেন। ঘটেছেও ঠিক এমনটাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি অনুদান পেয়েছেন। বইও এসেছে অনেক। এভাবেই পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জানান, পরিবার তাকে এ ব্যাপারে অনেক সাহস দিয়েছে। তার এ উদ্যোগে তার বাবা-মা ভীষণ খুশি।

আতিফ তার পাঠাগারের বইগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসেন। এরপর পরের সপ্তাহে পুরাতন বইগুলো ফিরিয়ে এনে আবার নতুন বই দিয়ে আসেন। ইতিমধ্যে তার নিকট অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বইয়ের জন্য ফোন আসে। তিনি প্রায় ১৪-১৫ কি.মি. দূরে সাইকেল চালিয়ে বইগুলো দিয়ে আসেন। আতিফ মনে করেন, তার এই বইগুলো পড়ে এলাকার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছেন। বিভিন্ন তথ্য জানছেন।

আতিফ বলেন, পাঠকদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্রছাত্রী। বিনামূল্যে বই পড়তে পেরে বেশ আনন্দিত তারা। এই বয়সে এরকম একটা উদ্যোগ নেবার কারণে গ্রামবাসীও তাকে অনেক ভালোবাসেন। আতিফ চান, বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে যেন একটা করে পাঠাগার গড়ে ওঠে। জ্ঞানের আলো যেন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। তিনি বলেন, তার এই উদ্যোগে যদি গ্রামবাসীর উপকার হয় এবং তারা বিভিন্ন বিষয়ে যদি সচেতন হতে পারেন এতেই তিনি খুশি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর