ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত তাঁর দেহটি শয়ান রয়েছে দশ নম্বর রাজাজি মার্গের তাঁর আবাসের হলঘরে। এই ঘরেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করতেন। ৮৪ বছরের নিথর দেহটি ফুলে ফুলে ঢাকা। সোমবার দিল্লির আর্মি রিসার্চ এন্ড রেফারাল হাসপাতালে ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে গেছেন ভারতের এই কৃতী সন্তান। দুপুর পর্যন্ত তাঁর মরদেহ থাকবে দশ নম্বর রাজাজি মার্গের বাড়িতে। কোভিড বিধি মেনে আমজনতা ফুলের মালা নিয়ে এসে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন। গান স্যালুটে দুপুর আড়াইটার সময় লোধি রোড মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টি হবে। স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় আগেই প্রয়াত। দুই পুত্র, এক কন্যা আছেন বাবার মরদেহ আগলে। জ্যেষ্ঠপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস এর প্রাক্তন সাংসদ। তিনিই প্রথম টুইট করে প্রণব বাবুর মৃত্যুসংবাদটি জনারণ্যে আনেন। অভিজিৎ অতিথিদের সামলাচ্ছেন যাঁদের মধ্যে অনেকেই ভিভিআইপি। কন্যা শর্মিষ্ঠা দিল্লি কংগ্রেসের মুখপাত্র। তিনি শোকবিহ্বল, কিন্তু একা হাতে সামলাচ্ছেন সবকিছু। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার ছয় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। এই ক’দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে সরকারি ভবনগুলোতে। সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে এই ক’দিন। প্রণব বাবুকে সম্মান জানাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মঙ্গলবার সব সরকারি দপ্তরে ছুটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাষ্ট্রীয় শোকপালনের ডাক দিয়েছেন রাষ্ট্রের বন্ধু রাজনীতিকের প্রয়াণে। সেদিন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। গভীর শোকের ছায়া প্রণব বাবুর সাবেক গ্রাম বীরভূমের কীর্ণাহারের মিরাটিতে। কদিন আগে প্রণব বাবুর আরোগ্য কামনায় যজ্ঞ হয়েছিল মিরাটির মন্দিরে। প্রণব বাবু পুজো করবেন বলে তাঁর বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। সব অসমাপ্ত রেখে চলে গেলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবু, সব হবে। কারণ প্রণব বাবুরই শিক্ষা ছিল, কারও জন্যে যেন কোন কাজ আটকে না থাকে। কাজ তাই চলবে, থাকবেন না শুধু সেই কিংবদন্তী হয়ে যাওয়া মানুষটি।
ওদিকে প্রণব মুখোপাধ্যায় এর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিঠিতে শোকসন্তপ্ত মুখোপাধ্যায় পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ছাড়াও ভারতের গভীর শোকের দিনে ভারতবাসীকে সমবেদনাও জানান তিনি। প্রণব বাবু যে বাংলাদেশের বন্ধু ছিলেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করে হাসিনা লিখেছেন, প্রকৃত এক বন্ধুকে হারিয়ে বাংলাদেশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও প্রণব বাবুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রণব বাবুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি তাঁর আচরণ সদাই ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি বার্তায় বলা হয়েছে, ভারতের এই গভীর শোকের দিনে বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের পাশে আছেন।
উল্লেখ্য, প্রণব মুখোপাধ্যায় মন্ত্রী থাকাকালীন সব সময়ই বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। বাংলাদেশ যে কোনও সংকটের সময় তাঁকে পাশে পেয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও বারবার বাংলাদেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।