করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য আজ সোমবার থেকে ফের লকডাউন দেয়া হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়। ফলে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা, ক্ষোভ, উদ্বেগ আর নৈরাশ্য। এই শহরে বসবাস করেন এক কোটিরও বেশি মানুষ। প্রথম লকডাউনের পর তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেনÑ আবার ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু সোমবার থেকে দেয়া কঠোর বিধিনিষেধে তারা এখন দিশাহারা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
এতে বলা হয়েছে, নতুন লকডাউনে বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। রেস্তরাঁ, ক্যাফে শুধু ডেলিভারি দিতে পারবে। যদি কেউ খাবার কিনতে যান তারা তা কিনে নিয়ে যেতে পারবেন।
অত্যাবশ্যক নন এমন খাতের কর্মীরা বাসায় বসে কাজ করবেন। স্থানীয়ভাবে প্রথম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় গত ১০ই এপ্রিল। এটা পিএসবিবি নামে পরিচিত। তখন স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ভীতি দেখা দিয়েছিল করোনাভাইরাসে সংক্রমণের আতঙ্ক। কিন্তু এখন তাদের সেই ভয় নেই। তাদের অনেকে আশা করছেন জাকার্তার গভর্নর আনিস বাস্বেদান এবারের লকডাউন বাতিল করার আহ্বান জানাবেন।
ফিসকেক স্যুপ বিক্রেতা ওকি সাত্রিয়া (২৭)। তিনি দ্য সানডে টাইমকে বলেছেন, আমার কাছে নিজেকে একটি পিং-পং বল মনে হচ্ছে। নাচানো হচ্ছে সামনে, পেছনে। কেন আমরা আবার লকডাউনে যাবো? অন্য দেশের মানুষ তো এমনটা আর করছে না। সরকার যখন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছে, তখন তা তো ভালোর জন্য হওয়া উচিত। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, যারা সামাজিক দূরত্ব মানে না, সরকার তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা মানার কোনো চাপ দিচ্ছে না। নিয়ম যারা ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে খুব কমই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে যেসব মানুষ মুখে মাস্ক পরে না তাদেরকে আমি ঘৃণা করি। দেখুন খোলামনে বলছি, মুখে মাস্ক পরা না থাকলে কোনো কাস্টমারকে আমি সেবা দেই না। তারাই সবচেয়ে বড় অপরাধী। তিনি বলেছেন, নতুন করে ব্যবসা চালু করেছেন দুই সপ্তাহ আগে। সপ্তাহান্তে তিনি উপার্জন করতে পেরেছেন ৫০ লাখ রুপাইয়া (৪৬০ ডলার)। মার্চে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার আগে তিনি সপ্তাহে যা বিক্রি করতেন এই অর্থ তার অর্ধেক। ওকির ভাষায়, এখন ভীষণ হতাশার মধ্যে আছি আমি। সরকারের এতো কঠোর হওয়া উচিত নয়।
ওকি একা নন, জাকার্তায় আরো নাগরিকের মধ্যে একই রকম কথাবার্তা। ৪ঠা জুন থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করে জাকার্তা। কিন্তু সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার রীতি বিদ্যমান থাকে। কিন্তু আরেক দল অধিবাসী আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষপাতী। তবে তাতে জীবন-জীবিকা অর্জন করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
নতুন লকডাউন ঘোষণার দু’দিন আগে শুক্রবার গভর্নর আনিস ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, প্লিজ ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন। এখন আমাদের হাতে যে সময় তা হলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসে নিশ্চিত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৬ জন। এর মধ্যে রাজধানী জাকার্তায়ই ৫২ হাজার ৮৪০ জন। দেশজুড়ে মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৫০ জন। এর মধ্যে শুধু জাকার্তায় মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮৬ জন।