× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনা সৃষ্ট মৃত্যু কমাতে স্বাস্থ্যতথ্য প্রবাহের গুণগত মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই

অনলাইন

ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার
(৩ বছর আগে) সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০, শুক্রবার, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন

সেপ্টেম্বর ১৮ তারিখ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য মতে বাংলাদেশে করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪৮৫৯ জন। মৃত্যুর আসল সংখ্যাটা যে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সেটা নিয়ে দেশের সাধারণ নাগরিকদের তো নয়ই, স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা সচিবের কোনো সন্দেহ আছে বলে আমার মনে হয় না। আসল সংখ্যাটা হয়তো দ্বিগুণ, তিনগুণ, এমনকি দশগুণ। সত্য যেহেতু কারো জানা নেই, তাই যিনি যেমনটা বলবেন সেটাই শুনতে হবে। সত্যের অভাবে গুজব ডালপালা মেলবে তাতে কি অবাক হওয়ার কোনো কারণ আছে?

বাংলাদেশে এই মৃত্যুর সংখ্যাটা নির্ধারণ করা হয় মোট কতজন RT-PCR টেস্ট এর মাধ্যমে পজিটিভ হিসাবে শনাক্ত হয়েছিলেন, আর তারমধ্যে কতজন মারা গিয়েছেন সেটার ভিত্তিতে। এর অর্থ হলো যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু কোনো টেস্ট করার পূর্বেই মারা গিয়েছেন তারা সরকারিভাবে প্রকাশিত মোট মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন না।

বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ হয় RT-PCR টেস্ট করতে যান না অথবা প্রাপ্যতা অথবা অর্থনৈতিক কারণে টেস্ট করার সুযোগই পাননা। প্রসঙ্গত, পৃথিবীব্যাপী খুব কম দেশই পাওয়া যাবে যেখানে মহামারির সময়ে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে টেস্ট করাতে হয়। প্রায় সব দেশেই কোন ঘরে করোনার লক্ষণ সহ কোনো ব্যক্তির সন্ধান পেলে সরকারি সংস্থার লোকজন এসে স্যাম্পল নিয়ে যায় এবং টেস্টের ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িঘর লকডাউন করে দিয়ে যায়।
কিন্তু বাংলাদেশের চেহারা ভিন্ন। এখানে আক্রান্ত মানুষকে টেস্ট করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়, টাকার বিনিময়ে স্যাম্পল দিতে হয়, আর ফলাফলের জন্য তিন-চার দিন অপেক্ষা করতে হয়। সবচেয়ে ভয়ানক হলো কোভিড পজিটিভ-নেগেটিভ সবাইকে এক লাইনেই দাঁড়াতে হয়, যা করোনার দ্রুত সংক্রমণের জন্য খুবই সহায়ক। আর এটা সম্ভব শুধু হীরক রাজার দেশেই!

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, সরকারিভাবে প্রাপ্ত মৃতের সংখ্যাটা ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। করোনা নিয়ন্ত্রণে বা মৃতের তালিকা ছোট করতে এই সংখ্যাটা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। এই অচল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এখনই ব্যবস্থা নিয়ে দেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে প্রতিদিন যত মানুষ মারা যাচ্ছে ইউনিয়ন এবং মিউনিসিপালিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে তাদের তথ্য জরুরি ভিত্তিতে সংগ্রহ করতে হবে। ভার্বাল অটোপ্সির মাধ্যমে মৃতের প্রাথমিক কারণ শনাক্ত না করে কোনো লাশের সৎকার করা যাবে না৷ এই তথ্য জেলার সিভিল সার্জনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিকাল নাগাদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড সংক্রান্ত বিশেষ সেলে বিশ্লেষণের জন্য পাঠাতে হবে। শুধু এই বিশ্লেষণের মাধ্যমেই জানা যাবে কোভিড এর সাইন সিম্পটম নিয়ে কতজন মারা গিয়েছে। RT-PCR টেস্ট করলে ভালো কিন্তু না করলেও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে যা করোনা সহ অন্যান্য রোগ সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

এই মুহূর্তে মৃত্যুর কারণ নির্ধারণসহ স্বাস্থ্য তথ্য প্রবাহের গুণগত মান বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আর এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, আর্থিক বরাদ্দ এবং বিভিন্ন স্তরে স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ।

[লেখক: বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মকর্তা]
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর