একটি ভাঙ্গা চোয়াল। কিছু হাড়। কিছু ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস। প্লাস্টিকের দাঁতভাঙ্গা একটি পকেট চিরুণি। ধাতব হাতঘড়ি। সম্প্রতি ইরাক-ইরান যুদ্ধে নিহত এক সেনার উদ্ধারকৃত অবশেষ এসব। যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানকার বিস্তারিত বর্ণণা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে এসব। হৃদয়বিদারক এছবি নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ইরাক-ইরান রক্তাক্ত যুদ্ধের কথা।
সেই যুদ্ধের ভয়াবহতা এখনও অনেক মানুষকে তাড়া করে ফেরে। কারণ, এতে দুটি দেশই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণহানি হয়েছে অকাতরে। সর্বশেষ যে সেনা সদস্যের অবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে তা নিয়ে ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, মাইসান প্রদেশে ইরাক-ইরান সীমান্ত এলাকায় পাওয়া গেছে ইরাকি নিহত সেনা কর্মকর্তা এলাবি ইউদানের এসব অবশিষ্টাংশ। ওই পোস্টে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে পোস্টটি শেয়ার দিতে, যাতে তার পরিবার খবরটি জানতে পারে।
মঙ্গলবার ২২ শে সেপ্টেম্বর সেই ভয়াবহ ইরাক-ইরান যুদ্ধের ৪০ বছর। এত আগের এই স্মৃতি এখনও মানুষকে কাঁদায়। এত বছর আগে সীমান্ত নিয়ে বিরোধে ইরানের বিরুদ্ধে আকস্মিক পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ শুরু করেন ইরাকের প্রয়াত নেতা সাদ্দাম হোসেন। অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে একথা জানিয়ে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে একচেটিয়া নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উচ্চাকাঙ্খা নিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ওই সময়ে ইরাক যুক্তি দিয়েছিল যে, যুদ্ধ আসলে শুরু হয়েছিল ১৯৮০ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর। ওই সময় ইরাকের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে গোলা নিক্ষেপ করেছিল ইরান। টানা আট বছর যুদ্ধ চলে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা অনেক দেশ ও আরবের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরাককে সমর্থন করতে থাকে। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ে ইরান। বাধ্য হয়ে তারা জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৮৮ সালের আগস্টে একটি শান্তিচুক্তি মেনে নেয়।
আধুনিক ইতিহাসে ওই যুদ্ধ ছিল ভয়াবহ, প্রাণঘাতী। এতে ব্যবহার করা হয়েছিল রাসায়নিক অস্ত্র। উভয় দেশে মারা গিয়েছেন কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ। আহত হয়েছেন আরো অগণিত মানুষ। নিখোঁজ হয়েছেন কতজন তার ইয়ত্তাই নেই। তবে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও কোনো দেশকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয় নি। যেখান থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল উভয় দেশের সেনাবাহিনী তাদের সেই অবস্থানে ফিরে যায়। এই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে দুই দেশে শুধু যে অকাতরে প্রাণহানি হয়েছে এমন নয়। অর্থনীতি ধসে পড়ে। তার প্রভাব পড়ে পুরো অঞ্চলে। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে পলিটিক্যাল ডিসিশন সেন্টারের চেয়ারম্যান হাদি জালো মারি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক সংস্কৃতি চালু করেছে ইরান-ইরাক যুদ্ধ। এই সংস্কৃতিতে প্রভাব রয়েছে নতুন নতুন সব বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামরিক লিগ্যাসির। যুদ্ধে একদিকে প্রাণহানি ঘটেছে, অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে ওই দুটি দেশে। কিন্তু তার প্রভাব পড়েছে দুই দেশের সীমান্তের বাইরেও। এই যুদ্ধের ফলে পুরো অঞ্চলটি বিভক্ত হয়ে পড়ে দুটি জাতিগোষ্ঠীতে। এর মধ্যে একটি হলো সুন্নি নেতৃত্বাধীন ইরাক এবং অন্যদি হলো শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরান।
শত শত কোটি ডলার ঋণ নিয়ে বিরোধে ১৯৯০ সালে কুয়েতে আগ্রাসন চালান ইরাকের প্রয়াত নেতা সাদ্দাম হোসেন। কিন্তু সেই আগ্রাসনের ওপরও ছায়া ফেলে এ ঘটনা। কুয়েত আগ্রাসনের কারণে ইরাকে প্রথম আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে আগ্রাসন চালানো হয়। তাতে ক্ষমতাচ্যুত হন সাদ্দাম হোসেন।