× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেরপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ

বাংলারজমিন

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

শেরপুরে গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দশ টাকা কেজির চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেয়া চাল বিতরণে সুফল পাচ্ছেন না দরিদ্ররা। অভিযোগ উঠেছে, শেরপুর উপজেলার দশটি ইউনিয়নে বিশজন ডিলারকে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৪ হাজার ৩৭১টি কার্ডের বিপরীতে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে ৪ লাখ ৩১ হাজার ১৩০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য দু’জন ডিলার নিয়োগ দেয়া আছে। ডিলারপ্রতি কার্ডের সংখ্যা ৭১৮টি। সরকারি চাল উত্তোলনের পর দরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানে সুবিধাভোগীদের মাঝে মৃত ব্যক্তি, কর্মের খোঁজে এলাকার বাহিরে থাকা এবং কার্ড হারানোর ফলে তাদের নামের খাদ্য হাতপায়ের টিপ মাস্টার রোলে দিয়ে অনিয়ম করে হিসাবের খাতায় বিতরণ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে দরিদ্রদের নামে দেয়া সরকারি বরাদ্দের ওইসব চাল অত্যন্ত গোপনে চলে যাচ্ছে শেরপুর বারদুয়ারী পাড়ার স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর গোডাউনে।
এরপর ওই সকল দশ টাকা কেজির চাল ডিলারের হাতে বিক্রি হচ্ছে ছত্রিশ টাকা কেজি দরে। ফলে সরকারি চাল বিতরণে সীমাহীন অনিয়ম হওয়ায় সরকারের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। বিশালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জানান, শেরপুর উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় বহু পুরাতন আমলের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সকল জনপ্রতিনিধি একত্রে প্রস্তাব দেয়া হলেও বাস্তবতা পায়নি ওই সকল আলোচনা। ফলে সরকারি চাল প্রকাশ্যে কালো বাজারে বিক্রি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
শেরপুরের খাদ্যবান্ধব ডিলারদের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দের চাল কিনতে ডিও নেয়া থেকে শুরু করে বিতরণের শেষ পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে ঘুষের টাকা দিতে হয়। শেরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেকেন্দার রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি মাসের ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে শেরপুর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহের সোমবার-মঙ্গলবার ও বুধবার সুবিধাভোগীদের মাঝে ওই সকল বস্তাভর্তি ত্রিশ কেজি চাল তিনশ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। খাদ্য অফিস জানায়, আগামী আমন ধান কৃষকের ঘরে আসার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে এই কর্মসূচি চালু থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহামারি করোনাকালীন সময়ে সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত সরকারি চালের সিংহভাগ চাল কালোবাজারে চলে গেছে। সরকারি খাদ্যবান্ধবের চাল বিতরণ মাস্টার রোলে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে। আবার অনেকেই এলাকায় নেই। বিতরণের মাস্টাররোলে তাদের নাম ও ঠিকানা আছে। নিজেরাই টিপ স্বাক্ষর করে তাদের চাল উত্তোলন করে বিক্রি দিয়েছেন এক ডিলার। এমনকি বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাল বিক্রির দিনগুলোতে সুবিধা ভোগীরা না এলেও ডিলারের নামে বরাদ্দের শতভাগ চাল বিক্রি হয়েছে কালোবাজারে। দরিদ্ররা জানায়, শেরপুর সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে বরাদ্দকৃত সবটুকু চাল উত্তোলন করে বিক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার বিধান থাকলেও সেখানে কোনো মজুত দেখা যায়নি। ডিলারের ঘরে ত্রিশ কেজি ওজনের মাত্র ৪৭ বস্তা চাল বাদে সব চাল সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিক্রি দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে বিশালপুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মো. লিটন জানান, তার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ৭১৯ জন কার্ডধারী হতদরিদ্র ব্যক্তি চাল কিনে থাকেন। তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বিক্রয় কেন্দ্রে আসেন। প্রথম দিন ২১শে সেপ্টেম্বর সোমবার দরিদ্রদের মাঝে ৩৬৮ জন এবং দ্বিতীয় দিনে ২২৯ জন চাল ক্রয় করেন। আর সামান্য কিছুমাত্র কার্ড বাকি থাকলেও তারা চাল পাবেন। তিনদিনের মধ্যে সুবিধাভোগীর মাঝে ওই সকল সরকারি চাল বিতরণ অনেকেই অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন।
বিশালপুর ইউনিয়নের সুবিধাভোগী সুফিয়া বেগম, মজিবর সেখ, কালু মিয়া, আঞ্জুয়ারা বেগম, বাবু মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সরকারি খাদ্যবান্ধবের চাল দুর্গন্ধযুক্ত নিম্নমানের, খাবার অযোগ্য।  তাছাড়া হাইব্রিড জাতের মোটা ধানের চাল নিতে আগ্রহী নয়। তাই দশ টাকা কেজির তিনশ’ টাকার বস্তার দাম মোট নয়শ’ টাকা। এদিকে গত ২১শে সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে শেরপুর শহরের হাটখোলা এলাকায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দু’টি ট্রাকে তিনশ’ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রির পর চলে আসে হাফ ডজনখানেক ডিলার-মালিকের ঘরে। সেখানে আসার পর সরকারি খাদ্যবান্ধবের চাল হাতেনাতে আটক হলেও মধ্যরাতে মোটা টাকায় রফা দফা করে সমাধান হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেকেন্দার রবিউল ইসলাম বলেন, মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। যেকোনো ডিলারের চাল কালোবাজারে বিক্রির বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে ডিলারের বিতরণ স্থলে সুবিধাভোগীরা চাল কেনাবেচা করতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিপত্রে পরিষ্কার করে কিছু বলা নেই। তবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কেনাবেচা বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ডিলারদেরকে। শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। সেইসঙ্গে এ ধরনের অনিয়ম-কর্মকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর