রংপুরের বদরগঞ্জে টানা তিনদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নি¤œাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে উপজেলার ২ হাজার ২৭০ হেক্টর আমনের ক্ষেত এখন পানির নিচে। প্রায় ৭ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এ অবস্থায় অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত মানুষজন গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত শুক্র, শনি ও রোববারের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। বদরগঞ্জ পৌর শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি সবখানেই পানিতে একাকার। বুক পানিতে টইটম্বুর ছিল বাড়িঘরও।
কোথাও কোমর পানি, আবার কোথাও হাঁটু পানি । এর আগে এমন বৃষ্টিপাত দেখেনি বদরগঞ্জের মানুষ।
এদিকে বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পানিবন্দি এসব মানুষজন। এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত একশ’ বছরেও হয়নি। এমন বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত এর আগে দেখেনি এ অঞ্চলের মানুষ। জেলার যমুনেশ্বরী, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট নদী উপচে নি¤œাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
ভুক্তভোগীদের পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বদরগঞ্জ পৌর শহরের মাস্টারপাড়া, ভাটিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাসন্তী মন্দিরপাড়া, মুন্সিপাড়া, শাহ্পুর, মমিননগর, বালুয়াভাটা যাদুনগরসহ প্রায় ২০টি মহল্লা পানিতে তলিয়ে যায়। এদিকে, উপজেলার লোহানীপাড়া, কুতুবপুর, মধুপুর, দামোদরপুর, রামনাথপুর, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০০ গ্রাম এখন পানির নিচে। সেখানকার মানুষজন নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। অনেকেই রান্না করতে না পেরে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
পৌর শহরের মহিলা কলেজে আশ্রয় নেয়া রওশন আরা বেগম (৫০) বলেন, তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে আমাদের দুইটি ঘর পানিতে ডুবে গেছে। ঘর থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারি নাই। পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি কলেজের একটি কক্ষে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত কেউ কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তা দেয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বদরগঞ্জ হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ১২০টি পরিবারের প্রায় ৩৫০ জন নারী-পুরুষ। এদের মধ্যে রাফিয়া ফারহানা, সাদ্দাম হোসেন ও আশা বেগম বলেন, চরম কষ্টে আমাদের দিন কাটছে। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা না থাকায় মহিলা ও শিশু নিয়ে আমরা চরম বেকায়দায় পড়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবাইদুর রহমান বলেন, বন্যায় ২ হাজার ২৭০ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে আমনের তেমন ক্ষতি হবে না। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ২ হাজার ২৪৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৭ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হবে চাষিদের।
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করে জেলায় পাঠানো হবে। তবে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সামগ্রী চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করা হয়েছে।