× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মহামারির বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর

অনলাইন

ড. মাহফুজ পারভেজ
(৩ বছর আগে) সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০, বুধবার, ৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নিঃশঙ্ক চিত্তের লড়াই ২০০ বছরে ছড়িয়েছে তাবৎ বঙ্গদেশে। বাংলার, বাঙালির আলোকায়নের সারথি হয়ে দ্বিশত বর্ষেও সদা দেদীপ্যমান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।  এমনকি, চলমান বৈশ্বিক মহামারির সঙ্কুল পরিস্থিতিতেও তাঁর চিন্তা ও কর্ম প্রাসঙ্গিক, যেমনটা প্রাসঙ্গিক তাঁর শিক্ষা, সমাজ সংস্কার ও নারী উন্নয়নের বিষয়াবলী।              
ঘটনাচক্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মদিন অতিক্রান্ত হলো বৈশ্বিক মহামারি করোনার সঙ্কুল পরিস্থিতিতে। তাঁর শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, নারী উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কর্মকাণ্ডের মতোই তার দানের কথা শুনতে ও বলতে আমরা গর্ব বোধ করে সর্বস্তরের বাঙালি। যদিও আমরা তাঁর দানশীলতার আদৌ কোনো অনুশীলন করি না, তথাপি এ কথা অনস্বীকায যে, বিদ্যাসাগর সমস্ত জীবন দু’হাতে উপার্জন করেছেন এবং দু’হাতে তা দান করে গিয়েছেন। এমনকি, মহামারি প্রতিরোধে অনন্য অবদান রেখেছেন তিনি।


১৮৬৯ সালে ম্যালেরিয়া বর্ধমান শহরে মহামারির আকার নেয়। চিকিৎসক গঙ্গানারায়ণ মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যাসাগর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেবাকার্যে। তাঁর একক চেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার বর্ধমানে বেশ কয়েক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সিভিল সার্জনকে বহাল করতে বাধ্য হয়।
কুইনিন প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে সূচনাতেই তা নিরসন করেন বিদ্যাসাগর। সঞ্জীবনী পত্রিকা লিখছে, ‘বর্ধমানে যখন বড় ম্যালেরিয়া জ্বরের ধূম, তখন আমরা কলিকাতায় বসিয়া শুনিলাম যে বিদ্যাসাগর মহাশয় নিজ ব্যয়ে ডাক্তার ও ঔষধ লইয়া সেখানে গিয়াছেন; এবং হাড়ি, শুড়ি, জেলে, মালা, জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলের দ্বারে দ্বারে ফিরিয়া চিকিৎসা করাইতেছেন। তিনি গাড়িতে বসিয়া আছেন, একটা মুসলমানের বালক হয়ত তাঁহার ক্রোড়ে রহিয়াছে। এই জাতিভেদ প্রপীড়িত দেশে এমন উদার বিশ্বজনীন প্রেম আর দেখি নাই।’


১৮৬৬ সালের মধ্যপর্বে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে ঈশ্বরচন্দ্র নিজের হাতে নিরন্ন মানুষের পাতে খাবার পরিবেশন করেছেন। একই সময়ে নিজের জন্মস্থান বীরসিংহে অন্নসত্র খুলেছেন, সরকারকে বাধ্য করেছেন একাধিক অন্নসত্র খুলতে। সংস্কৃত কলেজের ছাত্রকালে সারা রাত জেগে ওলাওঠা রোগীর সেবার কাহিনি তাঁর বাল্যকালের জীবনের উজ্জ্বল অধ্যায়। কর্মাটাঁড়ে কলেরা-আক্রান্ত মেথর-পত্নীর পাশে সারা দিন হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের বাক্স নিয়ে বসে থাকা, ওষুধ ও পথ্য খাইয়ে, রোগিণীর মল-মূত্র পরিষ্কার করে তাঁকে সুস্থ করে তোলার ঘটনা তারই সম্প্রসারিত বয়ান।


তাঁর জীবন, বক্তৃতার ঢক্কানিনাদের থেকে অনেক বেশি প্রায়োগিক, মাঠে নেমে কাজ করার শক্তিতে পরিপূর্ণ। ‘তাঁহার দয়ার মধ্য হইতে যে একটি নিঃসঙ্কোচ বলিষ্ঠ মনুষ্যত্ব পরিস্ফুট হইয়া উঠে,’ বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরু স্পষ্টত বলেছেন, ‘তার স্বরূপ সন্ধান আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত।’


এই করোনাকালে তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো ডাক্তার-ওষুধ নিয়ে ছুটে যেতেন গ্রামে-গ্রামান্তরে। শুধু বাক্য ও বাণীতে আবর্তিত হয়ে নয়, বরং কর্মহারা, অন্নহারা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগটাই হতে পারে মহত্তম বাঙালি বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষ পালনের প্রকৃত পথ এবং সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর