চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি’র (পিএলএ) পক্ষ থেকে যেকোন হুমকি মোকাবিলার জন্য চুমার, ডেপসাং এবং চুশাল সেক্টর সহ সীমান্ত এলাকাগুলোতে এ সপ্তাহে ট্যাংক মোতায়েন শুরু করেছে ভারতের সেনাবাহিনী। ভারতীয় মিডিয়াগুলোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, চুমার-ডেমচক সেক্টর বরাবর বিএমপি-২ যুদ্ধযানের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে টি-৭২ এবং টি-৯০ ট্যাংক। লাদাখ সেক্টর প্রতিরক্ষার জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ডেপসাং উপত্যকা ভূমি থেকে কমপক্ষে ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এ উপত্যকা সমতল। এর ফলে সেখানে ট্যাংক চলাচল বেশ সুবিধাজনক। এই পয়েন্ট থেকে বৃহত্তর কাশ্মীরের পূর্ব অংশে আকসাই চিনের সামনে হুমকি সৃষ্টি করতে পারে ভারতীয় ট্যাংক। এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ১৯৬২ সালে এশিয়ার এই দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে।
সেই থেকে এ অঞ্চল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিরোধী রয়েই গেছে।
আসলেই শীত আসছেভারতীয় সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, তারা শীতকালজুড়ে সীমান্ত পোস্টগুলোতে তাদের লোকবল বা সরঞ্জাম মোতায়েন অব্যাহত রাখার জন্য প্রস্তুত। আরো বলা হয়েছে, মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও সোভিয়েত/রাশিয়ান ট্যাংক ও সাজোয়া যান অপারেশনে সক্ষম। এত কম তাপমাত্রায় যেকোনো জ্বালানি জমে যাওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে বিশেষ জ্বালানি, যা এত কম তাপমাত্রায়ও সাজোয়া যানে ব্যবহার করা হবে।
ভূমি থেকে ১৪ হাজার ৫০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত ইস্টার্ন লাদাখ। শীতে এখানকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয় বলে এর পরিচিতি আছে। সেখানে শীতের সময় রাতে নিয়মিতভাবে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সঙ্গে থাকে সবকিছুকে জমিয়ে দেয়ার মতো উচ্চ গতির বাতাস। ভারতীয় মিডিয়াকে ফায়ার এন্ড ফিউরি কোরের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল অরবিন্দ কাপুর বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীতেই একমাত্র দ্য ফায়ার এন্ড ফিউরি কোর আছে। এমন কঠিন পরিবেশে কর্মক্ষম বিশ্বে এটাই একমাত্র বাহিনী। এমন পরিবেশে ট্যাংক, অগ্রবর্তী যুদ্ধযান এবং ভারি অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের কাজ। সেনাদের এবং সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা নিশ্চিত করতে তাদের জন্য এবং যন্ত্রপাতির জন্য পর্যাপ্ত আয়োজন নেয়া হয়েছে। অরবিন্দ কাপুর আরো বলেন, বিরূপ আবহাওয়া মোকাবিলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ভারতীয় সেনারা। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ সরঞ্জাম ও পোশাক। একই সময়ে প্রশিক্ষণও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট অস্ত্র মোতায়েনযুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জরুরি ক্রয় আদেশের মাধ্যমে নতুন এসআইজি ৭১৬ রাইফেল কিনেছে ভারত। সেগুলো ইস্যু করছে ভারতীয় সেনারা। লাদাখ উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলে সেনাদের কাছে ইস্যু করা হয়েছে অস্ত্র। পাকিস্তানের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখায় মোতায়েন করা ইউনিটগুলোতে এবং কাশ্মীরে সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিটে সরবরাহ দেয়া হয়েছে রাইফেল। ইন্ডিয়ান স্মল আর্মস সিস্টেম (আইএনএসএএস) ৫.৫৬ বাই ৪৫ মিলিমিটারের রাইফেলের পরিবর্তে ফেব্রুয়ারিতে এসআইজি ৭১৬ জি২ পেট্রোল অ্যাসল্ট/ব্যাটলফিল্ড ৭.৬২ বাই ৫১ মিলিমিটারের ৭২ হাজার ৪০০ রাইফেল অর্ডার দিয়েছে নয়া দিল্লি। জুলাই মাসে তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, ফাস্ট-ট্রাক প্রকিউরমেন্ট (এফটিপি) কর্মসূচির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি আরো ৭১ হাজার রাইফেল কিনবে তারা। এসআইজি ৭১৬ কেনার অংশ হিসেবে ক্যারাকাল ইন্টারন্যাশনাল ভিত্তিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে বাড়তি ৯৩ হাজার ৮৯৫টি সিএআর ৮১৬ (ক্যারাকাল সুলতান) কারবাইন অর্ডার করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই চুক্তির ব্যতিক্রম হলো, আইএনএসএএস রাইফেলের মতোই ন্যাটোর ৫.৫৬ বাই ৪৫ মিলিমিটারের একই কার্টিজ রয়েছে সিএআর ৮১৬ সুলতানে। তাই এসআইজি ৭১৬ এর পরিবর্তে ভারত দুটি রাইফেল ব্যবহার করবে, যাতে থাকবে ভিন্ন কার্টিজ। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব আরো নির্ভরযোগ্য এবং অধিক নির্ভরশীল অস্ত্র পাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে ভারত সরকারের মধ্যে একটি ধারণা হলো যে, এসব রাইফেলের নির্দিষ্ট সংখ্যক ভারতেই তৈরি হতে পারে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে দ্য ইকোনমিক টাইমস রিপোর্ট করেছে যে, এই চুক্তি জলেই মারা গিয়েছে। কিন্তু এখন কাশ্মীরের হুমকিতে মনে হচ্ছে, নয়া দিল্লি বড় চুক্তিতে যেতে পারে এবং তার সেনাদের হাতে আরো অস্ত্র দিতে পারে।
(লেখক যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবস্থান করেন। তিনি চার ডজনেরও বেশি ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটে লেখেন। ‘এ গ্যালারি অব মিলিটারি হেডড্রেস’ সহ বেশ কিছু বইয়ের লেখক। তার এই লেখাটি অনলাইন ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট থেকে অনূদিত)