পাকিস্তানে পার্লামেন্ট চালাচ্ছে অন্যকেউ। পার্লামেন্ট এখন ‘রাবার স্ট্যাম্পে’ পরিণত হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। বুধবার তিনি তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক বৈঠকে লন্ডন থেকে অনলাইনে যোগ দেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন এক্সপ্রেস টিবিউন লিখেছে, গত বছর চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে গিয়েছেন। তারপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। তিনি এবং তার পরিবার বলেছেন, পাকিস্তানে ফিরে তিনি নিজের দেশেই দাসত্বের মতো বাঁচতে চান না। তিনি মর্যাদার জীবন চান।
পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যে পার্লামেন্টের সদস্য তার স্বাধীনতা কতটুকু? দিনের কার্যসুচিতে অন্যরা তাদের এজেন্ডা ও নির্দেশনা দিয়ে যায়। ভোটের জন্য বিল দিয়ে যায়। এটা হলো দেশের ভিতর সমান্তরাল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন, আমরা একবার ঔপনিবেশবাদদের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছি মুক্তভাবে বাঁচার জন্য। কিন্তু আমরা মুক্ত বা স্বাধীন নাগরিক নই। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি স্বাধীন নাগরিক কিনা। সেইদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন মানুষ এসব কিছুর জন্য জবাবদিহিতা চাইবে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার দেশে ফিরে আদালতের মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি দেশে ফিরতে চাইছেন না। বলেছেন, তিনি অপমানের জীবন নিয়ে বাঁচতে চান না। জনগণ যদি সিদ্ধান্ত নেয় অত্যাচারী ও নিষ্পেষণকারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, তখনই বাস্তব পরিবর্তন আসবে। তা হতে পারে কয়েক মাস বা সপ্তাহে। এ জন্য কয়েক বছর প্রয়োজন নেই।
এ সময় তিনি সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জহিরুল ইসলাম সম্পর্কে বিস্ময়কর অভিযোগ করেন। বলেন, ২০১৪ সালে যখন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান ধর্মঘট চলছিল তখন তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন জহিরুল ইসলাম। নওয়াজ বলেন, মধ্যরাতে আমি একটি ম্যাসেজ পেলাম। তাতে আমাকে সতর্ক করা হলো। বলা হলো, আমি পদত্যাগ না করলে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। সামরিক আইন জারি করা হবে। নওয়াজ বলেন, জবাবে আমি তাকে জানিয়ে দিলাম আপনারা যা খুশি করুন। কিন্তু আমি পদত্যাগ করবো না।
উল্লেখ্য, পিএমএলএনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নওয়াজ শরীফের মেয়ে ও দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহিদ খাকান আব্বাসী, আহসান ইকবাল, মুহাম্মদ জুবাইর, রাজা ফারুক ও অন্য সিনিয়র নেতারা। এতে দলীয় সভাপতি শাহবাজ শরীফকে গ্রেপ্তারের ইস্যু আলোচিত হয়। উঠে আসে রাজনৈতিক কৌশল ও ভবিষ্যত করণীয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে নওয়াজ বলেন, তাকে যারা ক্ষমতায় এনেছে, তাদের সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা করতে হবে। তবে তাদেরকে জবাবদিহিতায় আনতে হবে। এই ব্যক্তি (ইমরান খান) সব কিছুর জন্য দায়ী। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দায় বর্তায় তাদের ওপর, যারা তাকে ক্ষমতায় এনেছে।