সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফের বন্যার আশঙ্কায় ভুগছে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে যমুনা নদীর কাজিপুর পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বৃহস্পতিবার সকালে এ খবর জানিয়েছে। এদিকে, পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর তীরবর্তী অঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হওয়ায় আবারও বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ভাঙনও দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে জেলার কাজিপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালীতে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন রোধে তারা দু’টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ পেলেই ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়। তবে যমুনা নদীতে পানি কখনো বাড়ছে কখনো কমছে এই অবস্থায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, সদর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীর ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ী, পাকুড়তলাসহ পাশের গ্রামগুলোর প্রায় ২ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে ভাঙনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। ভাঙছে চৌহালী ও সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরী এলাকায়।
আর যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে যমুনা তীরবর্তী অসংখ্য মানুষ। চোখের সামনে একের পর এক ঘরবাড়ি, জমিজমাসহ বিভিন্ন স্থাপনা যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরেও ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ার যমুনা তীরবর্তী এলাকাবাসী মানববন্ধন ও অনশন পর্যন্ত করেছেন। শাহ্জাদপুর্ উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ী এলাকার বৃদ্ধ ইয়াছিন প্রামাণিক (৮০) ও রহম আলী মোল্লা (৭২) গত ২রা সেপ্টেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে যমুনার তীরে অনশন করেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর পাউবো’র কর্মকর্তরা গিয়ে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন তারা। এখন তাদের একটাই দাবি ‘ত্রাণ চাই না, যমুনা তীর সংরক্ষণ বাঁধ চাই।
ইয়াছিন প্রামাণিক (৮০) ও রহম আলী মোল্লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ৭ থেকে ৮ বার বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছেন তারা। জমিজমা সব ভাঙনে গেছে। এখন সামান্য বাড়ীর ভিটা আছে। আবারো শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভিটে টুকু গেলে আর যাব কোথায়। কিন্তু তিন-চার বছর হয় শুনছি বাঁধ নিার্মাণ হবে কিন্তু আজও তা হলো না। সরকার এই জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করে দিলে ভাঙন রোধ হতো। আমাদের মতো শত শত গরিব মানুষের বাড়ি জমি রক্ষা হতো। তারা বলেন- ‘আমরা সরকারি ত্রাণ চাই না, যমুনা তীর সংরক্ষণ বাঁধ চাই’।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অনশনকারীদের সঙ্গে আমরা সমব্যথী। তিনি আরো জানান, কাজিপুরের পাটাগ্রাম এবং এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে শাহ্জাদপুরের কৈজুড়ী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা অনেকটা অরক্ষিত রয়েছে। এই দু’টি স্থানে ভাঙন রয়েছে। ভাঙন রোধে সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।